
ইউক্রেনের সামনে গভীর অন্ধকার
- আন্তর্জাতিক
- ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নজিরবিহীন সহায়তায় রণাঙ্গনে বেশ শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ইউক্রেন। তবে যুদ্ধের দুই বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে যুক্তরাষ্ট্রের পিঠটান দেখতে পাচ্ছে আগ্রাসনের শিকার দেশটি। সব ধরনের মার্কিন সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তার ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি ইইউতে কিয়েভের যোগদানও অনিশ্চিত করে তুলেছে রাশিয়ার মিত্র হাঙ্গেরি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্য আরও খারাপ সংবাদ এসেছে নিজ দেশ থেকেই। যুদ্ধ শুরুর পর দেশটিতে ব্যাপক রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে উঠলেও এখন তাতে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। এমনকি সেনাপ্রধানের সঙ্গে তীব্র বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন জেলেনস্কি।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র ও সরঞ্জামের সর্বশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করছে। এই প্যাকেজের আওতায় ইউক্রেনকে ১৭.৫ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘোষণা দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, নতুন সম্পূরক তহবিলের অনুরোধ কংগ্রেসে পাস না হলে এটিই হবে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শেষ নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার পর থেকে ইউক্রেন মার্কিন বৈদেশিক সাহায্যের শীর্ষ প্রাপক হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্শাল প্ল্যানের মাধ্যমে হ্যারি এস ট্রুম্যানের প্রশাসন ইউরোপ মহাদেশের পুনর্গঠনে বিশাল অঙ্কের সহায়তা দেয়। এর পর প্রথমবারের মতো একটি ইউরোপীয় দেশ এ ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র ও সরঞ্জামের সর্বশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করছে। এই প্যাকেজের আওতায় ইউক্রেনকে ১৭.৫ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘোষণা দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, নতুন সম্পূরক তহবিলের অনুরোধ কংগ্রেসে পাস না হলে এটিই হবে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শেষ নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ
জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির তথ্য অনুসারে, যুদ্ধ শুরুর পর বাইডেন প্রশাসন এবং ইউএস কংগ্রেস ইউক্রেনের জন্য ৭৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে মানবিক, আর্থিক এবং সামরিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর বাইরে যুদ্ধের কারণে অন্য অনেক মিত্র দেশকেও সাহায্য দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
ইউক্রেনের জন্য আরও প্রায় ৬১ বিলিয়ন ডলার সহায়তার অনুরোধ করেছেন বাইডেন। তবে সীমান্ত নিরাপত্তা বিতর্কে তা আটকে দিয়েছে কংগ্রেস। ইইউর নেতারাও ইউক্রেনের জন্য ৫০ বিলিয়ন ইউরো প্যাকেজ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি এই জোটে দেশটির সম্ভাব্য যোগদানের বিরুদ্ধে হাঙ্গেরি প্রাথমিক বিরোধিতা করছে।
ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন সিনেটে আগামীকাল বুধবার ইউক্রেনের সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন নিয়ে ভোট হবে। এর আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে শেষ লবিংয়ের জন্য আজ মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন জেলেনস্কি।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বলেছেন, জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসে বাইডেনের সঙ্গে দেখা করে রুশ আগ্রাসনকে প্রতিহত করার জন্য ‘যুক্তরাষ্ট্রের অটল প্রতিশ্রুতি’ নিরঙ্কুশ করার চেষ্টা করবেন।
শরণার্থী ঠেকানোর দাবিতে গত সপ্তাহে রিপাবলিকানরা ১১০.৫ বিলিয়ন ডলারের জরুরি ব্যয় বিল আটকে দিয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের তহবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে দেশটিকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে কিনা, তাতে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বাইডেন এবং তাঁর সহযোগীরা সতর্ক করেছেন, আগামী মাসগুলোতে ইউক্রেনকে সহায়তা বন্ধ করে দিলে তা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিজয়ের পথ প্রশস্ত করতে পারে।
এদিকে জেলেনস্কি এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনির মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। ৫০ বছর বয়সী জালুঝনি খুব কমই প্রকাশ্য কথা বলেন। তিনি কখনও কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেননি। তবে ইউক্রেনে তাঁর জনপ্রিয়তা জেলেনস্কির উদ্বেগের কারণ।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, জেনারেল ভ্যালেরি ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তিনি জেলেনস্কিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবেন। আগামী বছর দেশটিতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সামরিক আইন বহাল থাকলে নির্বাচন হবে না।