উন্নয়নের শাসন ও আমাদের উল্টো যাত্রা

উন্নয়নের শাসন ও আমাদের উল্টো যাত্রা

হাল আমলের বিখ্যাত চিন্তক টমাস পিকেটি তার সাম্প্রতিক বই ‘ক্যাপিটালিজম অ্যান্ড ইডিওলজি’র শুরুতেই বলছেন, বৈষম্য বা শোষণের বিষয়ে সমাজে এক ধরনের সম্মতি থাকে। সামাজিকভাবে বৈষম্য বিষয়ে সম্মতি না থাকলে কোনো ধরনের বৈষম্য বজায় রেখে সমাজ ও রাষ্ট্র শান্তভাবে পরিচালিত হতে পারত না। আমাদের দেশে এই বৈষম্য স্বাভাবিকীকরণ করা হচ্ছে উন্নয়নের নামে। দৃশ্যমান অবকাঠামোর দিকে তাকিয়ে চোখ তাতিয়ে ওঠা জনগণ বুঝতেই পারছে না আসলে উন্নয়ন মানে কী?

আমার ধারণা, উন্নয়ন ব্যাপারটা আমরা এখনো বুঝিনি। বিখ্যাত চিন্তক আশিস নন্দী উন্নয়নকে একটি ভায়োলেন্ট প্রকল্প হিসেবে দেখেন। ভায়োলেন্সের বাজে বাংলা সংঘাত হওয়ায় আমরা উন্নয়নের নামে জারি হওয়া নীরব ধ্বংসের দিকটা এই শব্দ দিয়ে বোঝাতে পারব না। নন্দী এই লেখকের সঙ্গে এক আলাপে বলেছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নেতারা কথায় কথায় সিঙ্গাপুর মডেল উপস্থাপন করেন। আমি হাসতে হাসতে যোগ করেছিলাম, নেতাদের সিঙ্গাপুর মডেল আর গডফাদারদের প্রিয় হলো, দুবাই মডেল। দেশকে এরা সিঙ্গাপুর বানিয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় আর গডফাদাররা কোনো সমস্যা হলেই দুবাই আছে সেফ ও আরামের শেল্টার হিসেবে- এমনটাই তাদের সাগরেদ ও অধীনস্থদের বলে থাকেন সাধারণত।

তোমার অধিকার, স্বাধীনতা, সম্মান, নাগরিক মর্যাদা সবকিছুর চেয়ে একটা ব্রিজ ও একটা মেট্রোরেল বা একটা বিরাট ভবন বেশি জরুরি। যদিও এই টাকাটা তোমার ট্যাক্স অথবা বিদেশি ঋণ থেকে সরবরাহ করা হবে।

আধুনিক সময়ে মানুষের ভোগের আকাঙ্খা বা আরামের লোভের একটা বিশাল মূল্য আছে। এই মূল্যকে শুধু যে বাজারই বুঝতে পারে তা না, এটার কদর ও ব্যবহার রাজনীতিবিদরাও বুঝতে পারেন। তোমার অধিকার, স্বাধীনতা, সম্মান, নাগরিক মর্যাদা সবকিছুর চেয়ে একটা ব্রিজ ও একটা মেট্রোরেল বা একটা বিরাট ভবন বেশি জরুরি। যদিও এই টাকাটা তোমার ট্যাক্স অথবা বিদেশি ঋণ থেকে সরবরাহ করা হবে। কিন্তু বিষয়টা হাজির করা হবে এমনভাবে যেন তুমি এগুলোর স্বপ্ন দেখতে কেবল, আর আমি ক্ষমতায় গিয়ে এগুলো করে দিচ্ছি। ফলে তুমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। কীভাবে আমি ক্ষমতায় আছি বা থাকব এটাও আমিই বুঝব। বিপুল মানুষের সামনে মিডিয়াও এটা এমনভাবে হাজির করে যে, তাতে উন্নয়নের রাজনৈতিক খেলাটা আড়াল হয়ে যায়। জনগণ নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতে থাকে। সে কতটা আরাম উপভোগ করবে, কতটা লাভবান হবে এই কামনার তাড়নায় সে আর কিছু দেখতে পায় না। কিন্তু উন্নয়নের মূলে যে ধরনের ধ্বংসমূলক প্রবণতা রয়েছে তা কখনো বিচার করে দেখা হয় না। এটাই মনে হয় বলে সেই, লোভে পাপ ও পাপে পতন…মানে, নিজের মর্যাদার পতন। গোলাম হতে বাধ্য হওয়ার শুরু এই লোভের মধ্য দিয়েই জারি হয়। কখনো কখনো এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা খানিকটা কাজে আসে যদি এসব তথাকথিত উন্নয়ন একটা স্বচ্ছতার মধ্যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত কোনো সরকার করতে পারে। তা না হলে উন্নয়নই একটা শ্রেণির লাভবান হওয়ার ম্যাজিকে পরিণত হয়। অনেক সময় দেখা যায়, রাস্তায় নতুন করে পিচ দেয়া হচ্ছে বা কোনো সংস্কারকাজ করা হচ্ছে। কিন্তু সাইনবোর্ডে লেখা হয়- উন্নয়ন কাজ চলিতেছে…। নির্মাণ বা সংস্কারও এখানে উন্নয়ন, ফলে দেখা যাচ্ছে, উন্নয়নের ধারণার একটা বিকৃতি ঘটেছে। কোনো কিছু নির্মাণ বা সংস্কারকে উন্নয়ন নামে দাগিয়ে দিয়ে অথরিটি নিজেদের ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির করতে চায়, সেবক হিসেবে না। অবকাঠামোগত নির্মাণ বা সংস্কারকাজ কীভাবে উন্নয়ন প্রকল্প হয়ে উঠল তা একটি ভালো অনুন্ধানের বিষয় হতে পারে। যে প্রভু হতে চায় সে তো যেকোনো সেবামূলক কাজকে নিজের দায়িত্ব মনে না করে নিজের দয়া আকারে হাজির করবে। আর যে দায়িত্ব আকারে দেখবেন তিনি কখনো নির্মাণকাজকে ‘উন্নয়ন’ বলে চালিয়ে দেবেন না।

দেখা যাচ্ছে,  এই উন্নয়নের ধারণার দর্শনের মধ্যেই একটা গলদ আছে। উন্নয়ন কথাটা যেদিকে ইঙ্গিত করে তার মানে দাঁড়ায় অগ্রগতি। আগে যা ছিল তার থেকে অগ্রগতি এবং এই অগ্রগতির খুব বাহ্যিক ও ব্যবহারিক বা চাক্ষুষ দিকটাকে আরো প্রকটভাবে হাজির করতেই উন্নয়ন শব্দটি জোর দিয়ে ব্যবহার করা হয়। দর্শনের দিক থেকে দেখলে এনলাইটেনমেন্টের যে সমস্যা বা দার্শনিক ক্রিটিক আছে, উন্নয়নের ঠিকই একই নোশন ও একই ক্রিটিক করা যায়। এনলাইটেনমেন্ট বা পশ্চিমা আলোকায়ন প্রকল্প এই যুক্তিতেই অন্য দেশ দখল করেছে যে, তোমাদের অবস্থা ভালো, কোনো ইতিহাস নেই, কোনো অগ্রগতি নেই, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী না- ফলে আমাদের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। আমরা তোমাদের এনলাইটেন করব। আলোকিত করব। সোজা বাংলায় দখল করব। উন্নয়নবাদীরাও একই কথা বলে, আগে তুমি খুব বাজে অবস্থায় ছিলে। এখনকার যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার কোনো যোগ্যতাই ছিল না। ফলে আমি তোমাকে জাতে তুলে দিচ্ছি। যোগ্য করে দিচ্ছি। উন্নয়ন করে দিচ্ছি, উন্নতি করে দিচ্ছি। মানে আমি তোমাকে শাসন করব। আমি তোমার প্রভু। এই হলো সহজ করে উন্নয়নের দর্শন।

মৌলিক শক্তি মানে, সম্মানের বোধ, ইজ্জতের বোধ এটাকে সে ধ্বংস করে ফেলেন উন্নয়নের বয়ান গিলিয়ে গিলিয়ে। আমরা ব্রিজ, দালান চাই না, কথা বলতে চাই, ভোট দিতে চাই। আমার সিদ্ধান্ত আমি নিতে চাই।

এসব উন্নয়নের ধারণার মধ্যেই যেহেতু ঘাপলা আছে, ফলে এটাকে আমরা বিনা বাক্যে মেনে নিতে পারি না। উন্নয়নকে আমরা এসেনশিয়ালি ভায়োলেন্ট বা ধ্বংসাত্মক প্রবণতা হিসেবে দেখতে পারি। এটা শুধু যে পরিবেশ বা আমাদের সম্পদকেই চুরি করার একটা ধ্বংসাত্মক প্রবণতা তা-ই নয়, এর মূল প্রবণতা হলো মানুষের মৌলিক শক্তিকে ডিজায়ার/ভোগের বাসনা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা। মৌলিক শক্তি মানে, সম্মানের বোধ, ইজ্জতের বোধ এটাকে সে ধ্বংস করে ফেলেন উন্নয়নের বয়ান গিলিয়ে গিলিয়ে। আমরা ব্রিজ, দালান চাই না, কথা বলতে চাই, ভোট দিতে চাই। আমার সিদ্ধান্ত আমি নিতে চাই। আমার নাগরিক মর্যাদা ফেরত চাই- এই প্রবণতাকে সহজেই ভোঁতা করতে পারে উন্নয়নের বয়ান। সমাজের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিভক্তি ও হিংসার স্রোতকে জাস্টিফাই করে দিতে পারে এই উন্নয়নের জিকির। মডার্নাইজেশন ও ক্যাপিটাল ফর্মেশনের স্বাভাবিক প্রবণতাতেই কিছু অবকাঠামোগত কাজ হয়, কখনো কখনো বিপুল বিস্ময় জাগানিয়া কাজও হতে পারে। কিন্তু এগুলোকে নিজেদের দান বা অবদান বলে প্রচার ও তারপর যেহেতু আমি এটা করেছি, ওটা দিয়েছি আমি যা বলব তাই। এটাই হলো উন্নয়নের রাজনীতির সারকথা। আশা করি, এই দিকটি আমরা কম-বেশি বুঝি। ফলে লম্বা আলোচনা না করে আমাদের ধ্বংসের জোয়ারে উন্নয়ন বয়ান কীভাবে ভূমিকা রাখছে তার একটা দিক উল্লেখ করে এই লেখা শেষ করব।

আপনারা শুনে খুব খুশি হন, গ্রাম হবে শহর। মানে- গ্রাম ধ্বংসের এই নীতিকে মনে করেন খুব উন্নত, প্রগতিশীল একটা ব্যাপার। এটা এই সরকারের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ধ্বংসাত্মক স্লোগনের একটি। এটা আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল শুরু থেকেই। এর আগের সরকারগুলোও গ্রামকে এভাবেই দেখত কম-বেশি। এরচেয়ে পরিবেশ ও সভ্যতাবিরোধী পজিশন আর কী হতে পারে? আধুনিকতাবাদী, এনজিওবাদী, বিজ্ঞানবাদী ও  চেতনা-সিপিবি-লীগ থেকে শুরু করে শিক্ষিত মানুষগুলোও এই চিন্তাকেই বাংলাদেশে অগ্রগণ্য বলে মনে করেন। এটাকেই মনে করেন এগিয়ে যাওয়া।  এই বুদ্ধিজীবীরাই আবার সুন্দরবনের জন্য কান্দেন। বোঝেন অবস্থা! দুই বছর আগে একটা দৈনিক পত্রিকার লিড নিউজ করেছিল- ‘গ্রামীণ পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি নয়’- গ্রামীণ পরিবারের আয়ের ৬২ ভাগ আসছে অকৃষি খাত থেকে। আর কৃষি খাত থেকে আসছে মাত্র ৩৮ শতাংশ। কী ভয়াবহ অবস্থা? বলাই বাহুল্য এই অকৃষি খাতের বড় অংশই লুটপাটজনিত আয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।

উন্নয়নের যে বিকার চালু করা হয়েছে, তা আপনারা এখনো টের পাননি। ফটকা শিক্ষিত জেনারেশনের মধ্যে ‘গ্রাম’কে ধারণাগতভাবেই পশ্চাৎপদ ধরে নেয়া হয়েছে

আমাদের কৃষিকে খুব পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। এখন কৃষকরা ধান চাষ বা কোনো ফসল উৎপাদনে আগ্রহী নন। কারণ পুরো দেশকে ভারতের বাজারে পরিণত করা হয়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে পরিবেশ এবং খাদ্য-নিরাপত্তা, পুরোটাই পরনির্ভর হয়ে গেছে। পেটে খিদে নিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে কোনো বড় বিপদ হলে। ভারত পেঁয়াজ না দিলে ২০০ টাকা কেজি দামে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। আমাদের নিজেদের গোটা পণ্য ব্যবস্থাপনা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পেঁয়াজ কান্ডে আমরা সেই প্রমাণ পেয়েছি। পুরো কৃষি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সারা দেশে তৈরি করা হয়েছে ফটকা ভোক্তা শ্রেণি। ফলে গ্রামেও সন্ত্রাস, নেশা ও গুন্ডামির বিস্তার সহজ হয়েছে। গ্রামের গ্রামত্ব আর নেই। একটা উগ্র ভোগ ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে গ্রামে। মানুষে মানুষে যে মমতার সম্পর্ক তা নাই হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে অনেক কথা বলা যায়। সংক্ষেপে শুধু বলব, উন্নয়নের যে বিকার চালু করা হয়েছে, তা আপনারা এখনো টের পাননি। ফটকা শিক্ষিত জেনারেশনের মধ্যে ‘গ্রাম’কে ধারণাগতভাবেই পশ্চাৎপদ ধরে নেয়া হয়েছে।

এসব ফটকা পরগাছা হাইব্রিড জেনারেশন মনে করে গ্রামকে শহর না করলে তো গ্রামের ইজ্জতই থাকে না। এরা ধরেই নিছে, গ্রাম মানেই পিছিয়ে পড়া। আগে গ্রামকে আধুনিক করার নামে নষ্ট করার আয়োজন করত এনজিওগুলো, এখন করছে ফ্যাসিবাদীরা। ফলে গ্রামের যে গুরুত্ব তা নষ্ট করার জন্য শহরের সব অসুখ গ্রামে আমদানি করা হয়েছে উন্নয়নের নামে। উন্নয়ন মানে এখন দাঁড়াচ্ছে অবকাঠামো করা। কোনো সরকার তার বাবা-মায়ের টাকায় এগুলো করে না। করে আমার-আপনার টাকায়, ফলে এটা নিয়ে গলাবাজি করার কিছু নেই। বরং জনগণের সর্বনাশ করে উন্নয়নের নামে পার্টির গুন্ডাদের ভোগের সুযোগ করে দেয়ার যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তা সমাজে জন্ম দিয়েছে গভীর অনৈতিক প্রবণতার। যেহেতু অবৈধ ক্ষমতার অংশীদার না হলে কোনো ভাগ পাওয়া যাবে না। ফলে দেশে কার্যত কোনো আদর্শগত বিরোধিতা করার অবস্থায় সাধারণ মানুষ নেই। অতি নিচু নৈতিক মন নিয়ে খালি নিজের একটু লাভের আশায় সরকারি দল সেজে রয়েছে। লাভের আশায় ও প্রাণ নিরাপদ রাখতে সবাই কোনো না কোনোভাবে উন্নয়নবাদী চেতনার ছায়াতলে শামিল হয়েছে। অথচ জনগণের কোনো ইজ্জতের বোধ থাকলে ভোট দিতে না পারার কারণে নির্বাচনের পর অসহযোগ আন্দোলন শুরু করত। কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। উন্নয়ন একটি স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা। আগেই উল্লেখ করেছি, বিখ্যাত চিন্তক আশিস নন্দী যেমন বলেন, ডেভেলপমেন্ট ইজ এ ভায়োলেন্ট ফেনোমেনন। উন্নয়ন সন্ত্রাসের সহায়ক শক্তি। গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারকে পাশ কাটিয়ে উন্নয়নে মেতে থাকা মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।

উন্নয়নের নামে উপমহাদেশে ফ্যাসিবাদ চর্চা করা হয়। এটা আইয়ুব খানের মডেল। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে ফাংশন করার উপযুক্ত করে গড়ে তোলেনি, বরং সব ধ্বংস করে দিচ্ছে। ফলে কোনো উন্নয়নই হচ্ছে না। মানসিকভাবে দরিদ্ররাই কেবল বলবে দালান হলেই সেটা উন্নয়ন। কোনো পরিকল্পনা নেই। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন স্বাধীনভাবে কাজ করার অবস্থায় থাকে না তখনো উন্নয়ন দাবি করা সরাসরি মিথ্যা বলা। ফলে বাংলাদেশে যা চলছে এটা উন্নয়ণের ‘গজব’।  উন্নয়নের এ ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর একটি কাজ করতে হয়। সেটা হলো আইন ও  সন্ত্রাসের মধ্যে পার্থক্য মুছে ফেলতে হয়। আমি যেটাকে বলি- রুল অব ল-লেস, ল। আইনত্বহীন আইনের শাসন জারি করতে হয়।  আরো কী করতে হয়, সবকিছুকে কেন্দ্রীভূত করতে হয়, সব জায়গায় নিজেদের লোকদের প্রতিস্থাপিত করতে হয়। একটা উদাহরণ দিই, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে যাতে দলীয় ক্যাডারগুলোকে ক্ষমতার ভাগ দেয়া যায় তাই এসব নির্বাচনকে দলীয় প্রতীকের আওতায় আনা হয়েছে। ফ্যাসিবাদকে প্রতিটি পরিবারে ছড়িয়ে দেয়ার এটা একটি ভালো উদ্যোগ ছিল। আগে দেখা যেত অনেক ব্যক্তি লীগ-বিএনপির বাইরে নিজের কর্ম ও সততার কারণে নির্বাচনে জিতে আসতে পারত। এই পরিবেশটা নষ্ট করে স্থানীয় নেতাদেরও একটি দলের গোলামে পরিণত করার জন্য এটা করা হয়েছে।

খুব নিচু ও ছোট মানসিকতার লোভী নাগরিক সমাজ তৈরি হয়েছে। সবার চোখ খালি লোভে চকচক করে। ফলে এই অন্যায়, ধর্ষণ, খুন কোনো কিছুই তাকে আর প্রতিরোধী করে না

ফলে বলাই যায় আমাদের অন্যতম শত্রু হলো এই উন্নয়নের জিকির। কারণ জনগণ সম্মান ও নাগরিক মর্যাদার চেয়ে সুবিধার দিকে বেশি মনোযোগী হয়েছে এই প্রচারের ফলে। খুব নিচু ও ছোট মানসিকতার লোভী নাগরিক সমাজ তৈরি হয়েছে। সবার চোখ খালি লোভে চকচক করে। ফলে এই অন্যায়, ধর্ষণ, খুন কোনো কিছুই তাকে আর প্রতিরোধী করে না। সবকিছুতে নিজের ধান্দা খোঁজেন পাবলিক।

জবাবদিহিতা ছাড়া উন্নয়ন যে ওপেন ডাকাতির লাইসেন্স তা জনগণ বুঝতে পারেনি। বাংলাদেশে যদি এমন উন্নয়ন এক হাজার বছরও চলে, দেশের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হবে না। ফলে এখন যা হচ্ছে, তা জাতিকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অশিক্ষাকে শিক্ষা। বিষকে মধু, ধর্ষণকে প্রেম ও মিথ্যাকে সত্য বানানোর এই আয়োজন আর কতকাল দর্শককে দেখতে হবে জানি না। কিন্তু নিজেদের পরিবর্তন না করে ক্ষমতা ও দল পরির্বতন করার চেষ্টার আরেক নাম ফাঁকি। এই ক্ষমতা/সরকার/দল আপনার-আমার মানসিকতারই প্রতিনিধিত্ব করছে কোনো না কোনোভাবে। ফলে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের দিকে না গিয়ে আগে এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে, বুঝতে হবে এবং তার পরই কাজের কাজ করতে হবে।

আরও পড়তে পারেন

ঋণের সুদ বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো

ঋণের সুদ বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো

ঋণের সুদহার বাড়ানো শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। গ্রাহক ভেদে ঋণের সুদহার বছরে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ইতিমধ্যে নতুন সুদহার…
কৃষি উৎপাদনের নেপথ্য কারিগর

কৃষি উৎপাদনের নেপথ্য কারিগর

এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি খ্যাত বাংলাদেশে ধানের ফলন ৩ কোটি ৫০ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। ধান উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হারও দারুন উৎসাহব্যঞ্জক।…
বদলের ছোঁয়া রাঙ্গামাটির অবকাঠামো ও সড়কে

বদলের ছোঁয়া রাঙ্গামাটির অবকাঠামো ও সড়কে

উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে মিজোরাম ও পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি পরিবেষ্টিত পার্বত্য জনপদের জেলা রাঙ্গামাটি। অবকাঠামো ও আর্থসামাজিক…