
কাল আসছেন মার্কিন কূটনীতিক উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু
- রাজনীতি
- জুলাই ১০, ২০২৩
ভারতীয় বংশোদ্ভূত উজরা জেয়া ও চীনা বংশোদ্ভূত ডোনাল্ড লু দুজনেই তুখোড় পেশাদার কূটনীতিক। ফরেন সার্ভিসে একজনের ক্যারিয়ার ২৭ বছরের, আরেকজনের ৩০। রাজনীতিতেও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অভিন্ন সমাধান, গণতন্ত্র, মানবিক সহায়তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা মেরামতে এখন ভারত সফর করছেন মার্কিন এ দুই কূটনীতিক। আগামীকাল ঢাকায় আসছেন তারা। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, শ্রম ইস্যু, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানব পাচার মোকাবেলাসহ অভিন্ন মানবিক উদ্বেগ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে করবেন আলোচনা।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর পর্যবেক্ষণে জানা যায়, দাম্ভিক প্রকৃতির ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও উজরা জেয়া কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করেন পেশাদারির সঙ্গে। দায়িত্ব পালনকালে স্বার্থ-সংঘাতের কারণ হিসেবে কখনই তার বংশপরিচয় ধরা দিতে পারেনি। বরং মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বারবারই দিয়েছেন দক্ষ কূটনৈতিকের পরিচয়।
ভারত ও বাংলাদেশ সফরের আগে এর প্রস্তুতি হিসেবে ওয়াশিংটনে বেশ তৎপর ছিলেন উজরা জেয়া। বৈঠক করেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তারাজিৎ সিং সান্ধুর সঙ্গে।
এদিকে ২০২২ সালের শুরু থেকেই বারবার সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় ঘুরেফিরে তার নামই উচ্চারিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-সংক্রান্ত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রধান চালক হিসেবে মনে করা হয় তাকে। এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলা ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নে ডোনাল্ড লু রয়েছেন নেতৃত্বের আসনে।
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে পাওয়া চীনা বংশোদ্ভূত ডোনাল্ড লুর জীবনবৃত্তান্তে বলা হয়েছে, ফরেন সার্ভিস অফিসার হিসেবে ৩০ বছরেরও বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অধীনে কাজ করছেন লু। এর মধ্যে ১২ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন পাকিস্তান ও ভারতে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে পাকিস্তানের পেশোয়ারে আসেন ১৯৯২ সালে। দেশটিতে মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৪ পর্যন্ত। ১৯৯৬ সালে যান ভারতে। নয়াদিল্লিতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের বিশেষ সহকারী ছিলেন ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। এরপর থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দিল্লি দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তার দায়িত্ব সামলান। ২০১০ সালে ভারতে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশনের দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে লু আলবেনিয়ায় নিয়োগ পান।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা সফরে আসার পর নির্বাচনসহ অন্তত পাঁচটি ইস্যুতে আলোচনা করবে মার্কিন প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এবং ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলী কৌর উজরা জেয়ার প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে এ সফরে বাংলাদেশ আসছেন। উজরা জেয়ার এ সফর মূলত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নেয়ার এবং দুই দেশের সরকারের মধ্যকার যোগাযোগ জোরদার করার একটি প্রয়াস। সফরকালে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ ছাড়াও প্রতিনিধি দলটির রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা রয়েছে।’
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার। বৈঠক হবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে। সফরকালে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতাসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গেও দেখা করতে পারে। এছাড়া প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারে দিনব্যাপী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এর আগে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ওই সফরে বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন।