
চিনি বর্জন করুন, কিছুদিনের মধ্যেই পরিবর্তন বুঝতে পারবেন
- স্বাস্থ্য
- নভেম্বর ২৪, ২০২৪
সব চিনি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। কারণ প্রাকৃতিক চিনি এবং কৃত্রিমভাবে যুক্ত চিনি (অ্যাডেড সুগার) এক নয়। তাই কোন ধরনের চিনি খাওয়া স্বাস্থ্যকর আর কোনটি এড়িয়ে চলা উচিত, তা জানা জরুরি।
অতিরিক্ত চিনি কেন ক্ষতিকর?
অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ শরীরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে, যেমন স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি। ফলে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিবিদ অ্যামি গুডসনের মতে, চিনি কম খেলে শুধু অতিরিক্ত চিনি গ্রহণজনিত রোগের ঝুঁকি কমে না, বরং মনের প্রশান্তি, উজ্জ্বল ত্বক, মজবুত দাঁত এবং মস্তিষ্ক ও শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ে।
কোন ধরনের চিনি নিরাপদ?
প্রাকৃতিক চিনি:
প্রাকৃতিক চিনি হলো এমন চিনি যা ফল, সবজি বা দুধের মতো প্রাকৃতিক খাবারে বিদ্যমান। এটি শরীরের শক্তি যোগানোর পাশাপাশি খাবারে মিষ্টতা যোগ করে এবং পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। উদাহরণস্বরূপ:
ফ্রুকটোজ: ফল ও সবজিতে থাকে।
ল্যাকটোজ: দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যে থাকে।
গ্লুকোজ: রুটি বা শস্যজাতীয় খাবারে থাকে।
ফলের মতো খাবারগুলিতে চিনি বেশি থাকলেও এতে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে, যা রক্তে চিনির শোষণ প্রক্রিয়া ধীর করে। ফলে রক্তে চিনির মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় না এবং শরীর দীর্ঘসময় ধরে শক্তি পায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি আমে প্রচুর প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও এতে থাকা আঁশ এবং ভিটামিন-সি শরীরের জন্য উপকারী।
কৃত্রিমভাবে যোগ করা চিনি (অ্যাডেড সুগার):
এ ধরনের চিনি মূলত খাবারে অতিরিক্ত মিষ্টতা যোগ করতে বা প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি প্রক্রিয়াজাত খাবারে যেমন প্যাকেটজাত পানীয়, ক্যান্ডি, বেকারি পণ্য ইত্যাদিতে বেশি মাত্রায় থাকে। পুষ্টি লেবেলে এটি “অ্যাডেড সুগার” নামে উল্লেখ থাকে।
কীভাবে চিনির পরিমাণ কমাবেন?
১. প্রাকৃতিক খাবার বেশি খান, যেমন ফল ও শাকসবজি।
২. প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং লেবেলে “অ্যাডেড সুগার” চেক করুন।
৩. চায়ের বা কফির মতো পানীয়তে কৃত্রিম চিনি যুক্ত করার পরিবর্তে প্রাকৃতিক মিষ্টি উপাদান (যেমন মধু) ব্যবহার করুন।
৪. স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম, বীজ বা কম মিষ্টি ফল বেছে নিন।
৫. দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার রাখুন, যা রক্তে চিনির শোষণ ধীর করে।
চিনি খাওয়া কমানোর অভ্যাস গড়ে তুললে শুধু রোগের ঝুঁকি কমে না, শরীর ও মন আরও সুস্থ থাকে। তবে মনে রাখবেন, প্রাকৃতিক চিনি এবং কৃত্রিম চিনি আলাদা। সঠিক জ্ঞান এবং সচেতনতা দিয়ে চিনি গ্রহণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন।
অতিরিক্ত অ্যাডেড সুগারযুক্ত খাবার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এ ধরনের খাবারে সাধারণত ভিটামিন, খনিজ বা আঁশের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান খুব কমই থাকে। ফলে এগুলো শরীরের চিনির ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। মায়ো ক্লিনিকের নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান ক্যাথরিন জেরাটস্কি এ বিষয়ে বলেন, “অ্যাডেড সুগারকে ‘ফাঁকা ক্যালোরি’ বলা হয়, কারণ এতে ক্যালোরি থাকলেও কোনো পুষ্টিগুণ নেই।”
অতিরিক্ত অ্যাডেড সুগার গ্রহণের কারণে নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস: ক্রোনস ডিজিজ বা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
হৃদরোগ ও স্ট্রোক: ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাডেড সুগারের মাত্রা ৫% বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৬% এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ১০% পর্যন্ত বেড়ে যায়।
ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা: অতিরিক্ত চিনি শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত না হলে তা চর্বি হিসেবে জমা হয়। ফলে ওজন বাড়ে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস: লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে ফ্যাটি লিভার ডিজিজের সৃষ্টি হয়, যা লিভারের টিস্যুর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
স্ট্যানফোর্ড হেলথ কেয়ারের ডায়েটিশিয়ান এলেইন হোন বলেন, “অতিরিক্ত চিনির কারণে ইনসুলিন নিঃসরণ ব্যাহত হয়, যা ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য সমস্যা তৈরি করে।”
অন্ত্রের স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রভাব
অ্যাডেড সুগার অন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে কাজ করে, যা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও স্বাস্থ্যকর অনুজীবের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। পুষ্টি মনোচিকিৎসক উমা নাইডু বলেন, “অ্যাডেড সুগার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
সুগার কমালে কী সুবিধা
অ্যাডেড সুগার কমিয়ে দিলে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো যায় এবং জীবনের মানোন্নয়ন সম্ভব হয়। চিনির গ্রহণ কমালে দেহে অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড-প্রোডাক্টস (AGEs) নামক ক্ষতিকর উপাদানের উৎপাদন কমে। এটি বার্ধক্য ও অ্যালঝেইমারের মতো রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান জেন মেসার বলেন, “রক্তে অতিরিক্ত চিনি কোলাজেন ও ইলাস্টিনের মতো প্রোটিনের সঙ্গে মিশে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে, যা বার্ধক্যের লক্ষণ তৈরি করতে পারে।” অতএব, অ্যাডেড সুগার সীমিত করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সম্ভব।