
জনগণ যে পরিবর্তন চায় তা নিয়ে আলোচনা করতে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে উন্মুক্ত করতে হবে: রনিল বিক্রমাসিংহে
- সাক্ষাৎকার
- ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
উন্নয়নের ফাঁকা বুলিগুলো যে ঘোরলাগা তৈরি করেছিল, দেরিতে হলেও শ্রীলংকার জনগণ তার শেষ দেখে ফেলে। বছরের পর বছর দুর্নীতি ও অপশাসনের পর এটি স্পষ্ট হয় যে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থপূর্ণ পরিবর্তন চায় তার জনগণ। ইতিবাচক পরিবর্তন যে তাদের প্রাপ্য এটা বুঝতে পেরেই পাঁচ হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের দায়ে ঋণখেলাপি একটি দেশের দায়িত্ব নেওয়ার দুঃসাহস দেখান রনিল বিক্রমাসিংহে। ১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ, সিলন ডমিনিয়নে জন্মগ্রহণকারী রনিল শ্রীয়ান বিক্রমাসিংহের রাজনীতিতে পথচলা শুরু চাচা জুনিয়াস জয়াবর্ধনের হাত ধরে। প্রেসিডেন্ট চাচার স্বপ্ন ছিল ‘একদিনের জন্য’ হলেও যেন রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। এবার চাচার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এই পথে আসতে তিনি হয়েছিলেন—পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রী, যুব ও কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী এবং ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী। নিজের ২ হাজার ৫০০টিরও বেশি বইয়ের গ্রন্থাগারকে সবচেয়ে ‘বড় সম্পদ’ বলে মনে করতেন রনিল। বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দিলে সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্য সবার মতো বিক্রমাসিংহে নিজেও হয়তো জানেন, দেশের মানুষের কাছে তিনি খুবই অজনপ্রিয়। যেহেতু রাজাপক্ষে পরিবারের সমর্থন নিয়েই তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। লন্ডনভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিল। যেখানে বিক্রমাসিংহে ব্যাখ্যা করেছেন কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং কিভাবে তিনি শ্রীলঙ্কার পুনরুদ্ধারে সাহায্য করার পরিকল্পনা করছেন। সাক্ষাৎকারটির অংশবিশেষ ‘পূর্বা’র পাঠকের জন্য অনুবাদ করা হলো। বি.স
আমাদের সাথে দেখা করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, মিঃ বিক্রমাসিংহে। তিন সপ্তাহ আগে শেষবার যখন আমরা এখানে ছিলাম, তখন এটি স্পষ্টই একটি সংকটের দেশ ছিল। অথচ গত রাতে বিমানবন্দর থেকে ঢোকার পথে রাস্তার দৃশ্যগুলো দেখে আমরা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি সেই অবস্থা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ২১শে জুলাই এর পর থেকে কি এমন ঘটেছে যে এতটা পরিবর্তন হয়েছে?
বিক্রমাসিংহে: প্রথমত, আমি মনে করি মানুষ আইনশৃঙ্খলা ফেরত চাচ্ছিল। অনেক মানুষ হতাহত হচ্ছিল, অনেক মানুষ তাদের চাকরি হারাচ্ছিল, আর অনেক চাকরিজীবী তাদের কাজে যেতে পারছিলেন না। সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অনেক অভিযোগ ছিল, কিন্তু যখন রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া (রাজপাকসে, বিক্রমাসিংহের পূর্বসূরি) চলে গেলেন, তখন তারা আমাদের আরেকটি সুযোগ দিতে চাইলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে হয়েছে, সংসদ ভোট দিয়েছে এবং বিদ্যমান মন্ত্রিসভা গ্রহণ করেছে যাতে আমরা কমিটি ব্যবস্থার মধ্যে বাইরের লোকদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় সরকার আহ্বান করতে পারি। আর আমরা এর জন্য কিছু নতুন ব্যবস্থা তৈরি করব। মানুষ জানে যে আমরা একটি কঠিন সময়ের দিকে যাচ্ছি। এবং তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এমনকি যারা বিক্ষোভ আন্দোলন সমর্থন করেছিল, তারাও মে মাসের শেষের দিকে বিশৃঙ্খলার কারণে প্রায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।
দ্য ইকোনমিস্ট: দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, দেশে জ্বালানির পরিমাণ তুলনামূলক বেড়েছে। QR কোড সিস্টেমটি একটি বড় সাফল্য বলে মনে হচ্ছে, জ্বালানীর জন্য অপেক্ষমান সারিগুলো অদৃশ্য হয়ে গেছে। রাস্তায় গাড়ি ও অটোরিকশা বেশি। দেশের মেজাজ পাল্টাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
বিক্রমাসিংহে: প্রথমে, আমাদের জ্বালানী সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছিল। দ্বিতীয়টি হলো যে, আমরা সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছিলাম। এমনকি আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদেরও স্বাগত জানানো হয়। যে সমস্ত পরিবর্তন করা হবে তা দেখার জন্য আমরা একটি জনগণের পরিষদ প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক। তত্ত্বাবধান কমিটিতে নতুন স্থায়ী আদেশে পাঁচজন যুব প্রতিনিধিকে জায়গা দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে সেখানে তারা প্রশ্ন করতে পারে। আর যদি তারা কখনো কোনো প্রতিবেদনে অংশগ্রহণ করতে না পারে, তবে তাদের মতামতগুলো রেকর্ড আকারে সেখানে লিপিবদ্ধ করতে পারে। আর সর্বদলীয় প্রশাসনের সব দল যাতে একযোগে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য খোদ সংসদই চেষ্টা করছে।
আপনি বলেছেন যে এই ধরনের সরকার গঠন করা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে এমন কি আছে এত গুরুত্বপূর্ণ? আর এটাকে সমস্যাযুক্ত করে রাখছে কে?
বিক্রমাসিংহে: এখানে বড় একটি সংকট আছে। তাহলে আমরা কীভাবে দলগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারি? আমি ২২ তম সংশোধনী— যেখানে প্রেসিডেন্টের এক্সিকিউটিভ ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে; সেটাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছি, যেটা সবাই চেয়েছিল। তাই আমরা সংবিধানে সেই সংশোধনী আনার ব্যবস্থা করছি। এবং এরপর জনগণ চাইলে আপনি একটি নতুন সংবিধানের জন্য একটি নতুন গবেষণাও শুরু করতে পারেন। আমি সেখানে একই সাথে নির্বাচন কমিটি, তদারকি কমিটি, এবং একটি নতুন জাতীয় কাউন্সিলকে অন্তর্ভুক্ত করছি; যা কিছুটা ইউরোপীয় কাউন্সিলের আদলে তৈরি। এছাড়া, কম করে হলেও আমরা কিছু যৌথ কর্মসূচি পালন করব যাতে সরকার জানতে পারে যে আমাদের দলীয় সমর্থন আছে। অন্যান্য বিষয় নিয়ে মাসে একবার নিয়মিত আলোচনা করা যেতে পারে। যাতে করে দলের নেতারা দলের সাথে যুক্ত থাকে। আমি বলেছিলাম যে, প্রয়োজনে মন্ত্রিসভায় আমন্ত্রিত তদারকি কমিটির চেয়ারম্যানদের জন্যও আমি কিছু করতে রাজি আছি।
এই সর্বদলীয় সরকার গঠনে বাধাগুলো কী কী?
বিক্রমাসিংহে: আমরা কেবলমাত্র আলোচনায় আছি এবং প্রতিটি দল এখন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত। এটা নিছক দলগুলোর প্রশ্ন নয়, বরং দল ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্ন। দেশকে সংকট থেকে বের করে আনার দায়িত্ব সংসদের। তাই আইএমএফের প্রস্তাবগুলোও আমি সংসদে উল্লেখ করি। যদি কারও কাছে আরও ভাল প্রস্তাব থাকে তবে অবশ্যই আমরা সেগুলো দেখব। অন্যথায় আমাদের যা আছে তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
আপনি আরও উল্লেখ করেছেন যে শ্রীলঙ্কাকে ২৫ বছরের মধ্যে শুধু উচ্চ-মধ্যম আয়ের নয় বরং উচ্চ আয়ের দেশ বানাতে চান। সেটা করতে হলে আপনাকে কোন কাজগুলো এখনই করতে হবে?
বিক্রমাসিংহে: আমাদেরকে ব্যাংকের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে হবে। আমরা এখন কিছু রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিষ্পত্তির দিকে তাকিয়ে আছি, যা আমাদের প্রায় দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার দেবে। আর এটাই হবে আমাদের ভিত্তি। তারপরে নিজেদেন তুলে ধরার জন্য আমাদের কাছে ২০১৮-১৯ এ ব্যবহৃত কিছু প্রতিবেদন রয়েছে যা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, মূলত এর মাধ্যমে আমরা এই অঞ্চলের সাথে নিজেদেরকে সংহত করতে পারি। দক্ষিণ এশিয়ায় আমি খুব বেশি আঞ্চলিক সংহতি দেখতে পাচ্ছি না। তাই আমরা ASEAN (অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস) এবং এশিয়ান বাণিজ্য চুক্তি RCEP (রিজিওনাল কম্পরেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ) এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে নজর দেব।
আপনি ভারতের সহায়তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খুব প্রশংসা করেছেন। অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতারা কতটা সহানুভূতিশীল?
বিক্রমাসিংহে: তাদের মধ্যে অনেকেই আছে, কিন্তু তারা বলছে আগে আইএমএফের কাছে যান। তারা অনুভব করেছিল যে, শ্রীলঙ্কার নিজের কারণেই এই সংকট সংঘঠিত হয়েছে। আমি মনে করি আইএমএফ চুক্তি পেলে আরও সহায়তা পাবো।
প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণ চীন সাগরে আমরা যে অস্ত্রের প্রদর্শনী দেখি, আপনি মনে করেন ভারত মহাসাগর হয়তো এই ধরণের প্রদর্শনীর পরবর্তী স্থান?
বিক্রমাসিংহে: কেউই চায় না এটা ঘটুক। উদাহরণস্বরূপ, ন্যান্সি পেলোসি নিজে থেকেই তাইওয়ানে একটি সংকট তৈরি করেছেন। আমি মনে করি না মার্কিন সরকার তার এই সফরে খুশি হয়েছে, তবে তাকে তাদের সমর্থন করতে হয়েছিল। আমরা চাই না এখানে এমন কিছু ঘটুক। আমরা ভারতকে এই এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে দেখি। এবং তারপরে অন্যান্য সমন্ত দেশও উপস্থিত থাকতে পারে যতক্ষণ না এটি ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বা দেশগুলোর মধ্যে বৈরিতা বাড়ায়।
আপনি যেভাবে এটা ম্যানেজ করছেন সেখানে অন্যান্য দেশের জন্য কি শিক্ষা আছে?
বিক্রমাসিংহে: আমরা যা করেছি এবং যা করিনি তা থেকে তো শেখার কিছু থাকবেই।
অর্থনীতিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার বিষয়ে, আপনি কাকে আপনার সহকর্মী বা প্রকৃতপক্ষে কাকে আপনার প্রভাবক বা প্রতিযোগী মনে করেন?
বিক্রমাসিংহে: আমরা সিঙ্গাপুরের মতো হতে চাই। কিন্তু থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের মান অনুকরণ করে শুরু করতে চাই।
আগের সরকার যে কাজগুলো করেছিল তার মধ্যে একটা কাজ ছিল জনগণের সাথে প্রতারণা করা যে, জিনিসগুলো এতটা খারাপ না। কিন্তু মানুষ বোকা না। তারা জানত যে জিনিসগুলো খারাপ, এবং তারা রাস্তায় বেড়িছে এসেছিল। সম্ভবত সেই আশায় আপনি জনগণের প্রতি সৎ হয়ে বলতে পারছেন যে, “দেখুন, আমি আপনাদের সাথে একই কাতারে আসতে যাচ্ছি,”। আর এটি তাদের বোঝাবে যে প্রতিবাদ করার কোনো মানে নেই, এটিই কী আপনার সৎ হওয়ার কারণ?
বিক্রমাসিংহে: আমিও এমনটাই মনে করছি। আমরা এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয়গুলোর দিকেও নজর দিচ্ছি, তারা সিস্টেমের যে পরিবর্তন চায়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতে, রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে উন্মুক্ত করতে।
আপনি সামরিক বাহিনীর সাথে বেশ উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করেছেন। লোকেরা আপনাকে যেমন দেখে অভ্যস্ত এটি আসলে তার থেকে ভিন্ন কিছু। আপনি কি আমাদের এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন?
বিক্রমাসিংহে: সামরিক বাহিনীর সাথে আমার কোনো উষ্ণ সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্রপতি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে তাদের সাথে আমার কিছু কাজ থাকে। যেমন, পার্লামেন্টকে সুরক্ষিত করার কাজ করে এয়ার মোবাইল ব্যাটালিয়নকে সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য আমি সেখানে গিয়েছিলাম। এবং এয়ার মোবাইল ব্যাটালিয়ন এমন একটি ব্যাটালিয়ন যা আমি ১৯৯৩ সালে শুরু করেছি। তাই তাদের মধ্যে থাকতে পেরে আমি বেশ খুশি ছিলাম। আমি নিরাপত্তা পরিষদে যাই, যা আমাকে সপ্তাহে একবার করতে হয়। এর বাহিরে, যে ইভেন্টগুলিতে রাষ্ট্রপতিকে উপস্থিত থাকতেই হবে আমি শুধুমাত্র সেখানে যাই।
ভারতের কাছ থেকে পাওয়া ডর্নিয়ার এয়ারক্রাফ্ট জিনিসটি সত্যিই আকর্ষণীয়। এবং আবারও বলতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কা একটি ভারসাম্যপূর্ণ কাজ করেছে। প্রতিবেশীর সাথে এই ভারসাম্যপূর্ণ কাজের কি ব্যাখ্যা আপনি দিবেন?
বিক্রমাসিংহে: এই এলাকার সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে কলম্বো সংলাপে আমরা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। এবং ডর্নিয়ার এয়ারক্রাফ্ট একটি সামুদ্রিক নজরদারি বিমান, যার মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার দিগন্ত বিস্তৃত হলো। আমাদের লোকেদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ভারত ডর্নিয়ার দিচ্ছে, কিন্তু তাদের পাশাপাশি আমরাও কাজ করছি। এখন সমস্যা হলো জ্বালানির ঘাটতি। আমাদের নৌবাহিনী পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করতে পারছে না। নৌকা দিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া লোকদের ফিরিয়ে আনার জন্য একই রকম আরেকটি অপারেশন আমরা অস্ট্রেলিয়ানদের সাথে পরিচালনা করছি। যেখানে আমরা প্রতি সপ্তাহে প্রচুর সংখ্যক লোককে বাধা দিচ্ছি। প্রতি সপ্তাহে ৪০, ৫০, ৬০ জন করে মানুষ এখান থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সুতরাং, আমরা ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া উভয়ের সাথেই কাজ করছি।
কেন আপনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে আপনার পোর্টফোলিওর অংশ হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন?
বিক্রমাসিংহে: প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মূলত রাষ্ট্রপতির হাতে এবং আমি এটি গ্রহণ করেছি যাতে আমরা স্থিতিশীল করতে পারি এবং আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তবে আমি মনে করি আমাদের প্রতিরক্ষা কাঠামোতেও অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। এবং আমরা ২০৩০ সালের প্রতিরক্ষা সম্পর্কে কথা বলছি, অর্থাৎ তারপর থেকে এটিকে আরও সামনে নিয়ে যাওয়ার ব্যপারটি আসছে। তবে এর কিছুটা পুনর্গঠন এবং আধুনিকীকরণ করতে হবে।
তাহলে শ্রীলঙ্কার জন্য প্রতিরক্ষা অগ্রাধিকার কী?
বিক্রমাসিংহে: প্রথমত, এখানে নিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশ এবং নাগরিক শক্তিকে সাহায্য করা। দ্বিতীয়ত, আমরা সমুদ্রপথে ভারত, অস্ট্রেলিয়ার সাথে কাজ করছি। পাশাপাশি আমরা অন্য দিকেও তাকাচ্ছি, আমরা এখন মালিতে আছি এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে আমাদের ভূমিকা প্রসারিত করছি। মালিতে আমরা বেশ ভালো করছি। সুতরাং আমরা সেটাকে প্রসারিত করতে পারি, কারণ এখানে হয়তো আমাদের একটা সুযোগ আছে। কিন্তু একই সাথে তার জন্য আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেটও রাখতে হবে।
আপনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রথম দিকে, আমরা এই ভবনের সামনে কিছু লোকের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা নিশ্চিত ছিল যে আপনি কোনো-না-কোনোভাবে রাজাপাকসাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন বা তাকে রক্ষা করছেন। আপনি কিভাবে লোকেদের এই ধরনের অনুভুতির মোকাবেলা করবেন?
বিক্রমাসিংহে: আমি রাষ্ট্রপতি (চন্দ্রিকা) কুমারাতুঙ্গার সাথে ১৯৯০ থেকে ২০০১ নির্বাচন পর্যন্ত মাত্র দুই বছর কাজ করেছিলাম। পরের বার আমি প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনার সাথে কাজ করেছিলাম। তিনি অন্য দলের ছিলেন কিন্তু আমরা তাকে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিলাম নিজেদের কিছু সমস্যার কারণে। তাই পরিস্থিতির দাবির কারণে ভিন্ন মতের অনেক প্রেসিডেন্টের সাথেও কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।
আর দুই পক্ষেই কিছু মন্ত্রী আছেন যারাও এই একই কাজ করেছেন। এবং আমি প্রেসিডেন্ট হয়েছি কারণ পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল, এবং আমাদেরকে এটি অর্থনৈতিকভাবে হ্যান্ডেল করতে হয়েছিল। আর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আমি প্রথম পছন্দও ছিলাম না, তারা বিরোধী দলের নেতা সজিথ প্রেমাদাসাকে এটি অফার করেছিল। তিনি এটা নিতে চাননি, তাই আমি এসেছি।
আপনি কি ভেবেছিলেন আপনি রাষ্ট্রপতি হবেন?
বিক্রমাসিংহে: আমি ভাবিনি যে আন্দোলনকারীরা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিবে, আর আমি রাষ্ট্রপতি হবো।
মি. বিক্রমাসিংহে, সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ইনসার্ট
আমরা সিঙ্গাপুরের মতো হতে চাই। কিন্তু থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের মান অনুকরণ করে শুরু করতে চাই