
ডলার সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি
- অর্থনীতি
- ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তবুও সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে কমছে আমদানি। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। এসব কারণে ডলারের সরবরাহ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকের ডলার কেনাবেচার স্বাভাবিক গতি এখনও ফেরেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ৩ হাজার ২৪৫ কোটি ডলার বা প্রতি মাসে গড়ে ৪৬৪ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতি মাসে গড়ে ৫২০ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে। আবার জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় বেড়ে ১৯৬ কোটি ডলারে ঠেকেছে। আগের মাস ডিসেম্বরে যা ১৭০ কোটি ডলারের নিচে ছিল। এই মাসের প্রথম ১০ দিনে ৬৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। ফলে ফেব্রুয়ারিতেও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। আমদানি কমাতে শতভাগ পর্যন্ত এলসি মার্জিন, তদারকি জোরদারসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে আমদানি ব্যয় ২ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৮১৩ কোটি ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অনেক দিন পর সামগ্রিকভাবে ব্যাংকগুলোর ডলার ধারণের সীমা নেট ওপেন পজিশন লিমিট (এনওপি) ইতিবাচক ধারায় এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার এনওপি দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে এনওপি সর্বোচ্চ ৫১ কোটি ৫৪ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয় গত ৩০ নভেম্বর। গত সোমবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ কোটি ডলার। কিছুদিন আগেও যা ২০০ কোটি ডলারের সামান্য বেশি ছিল। ডলার সরবরাহের কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এলসি খোলা বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে গত সোমবার ব্যাংকগুলোতে মোট ২ হাজার ২০০ এলসি খোলা হয়েছে। এখন দৈনিক গড়ে এলসি খোলা হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার। দুই মাস আগেও যা এক হাজারের ঘরে নামে। তবে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলার কেনাবেচায় গতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। যে কারণে ছোট ব্যাংকগুলোর সংকট আগের মতোই রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এলসি খোলার সংকট না থাকার কথা বললেও ব্যবসায়ীরা এখনও কাঙ্ক্ষিত এলসি খুলতে না পারার কথা বলছেন। গত রোববার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সহনীয় রাখার বিষয়ে মতবিনিময় সভা করে। ওই সভায় দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ ও টি কে গ্রুপের প্রতিনিধি জানান, বিভিন্ন পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপের পরও ডলারের অভাবে এখনও তাঁরা আশানুরূপ এলসি খুলতে পারছেন না। এলসি খোলা গেলেও সময়মতো দায় নিষ্পত্তি না হওয়ায় পণ্য খালাসে দেরি হচ্ছে। এতে তাঁদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে। যদিও পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং আমদানি কমার ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে আন্তঃব্যাংক বেচাকেনা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমদানি কমিয়ে রাখলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি কমবে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। ফলে এখন রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, রমজান ও দুই ঈদ সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলা বেড়েছে। পরিস্থিতির যে উন্নতি হয়েছে, ব্যাংকগুলোর ডলার ধারণ পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায়। এরই মধ্যে এনওপি ইতিবাচক ধারায় এসেছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। তবে উন্নতি মানেই একদিনে সব ঠিক হয়ে যাবে, তেমন নয়।
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ বলেন, গত কয়েক মাসে আমদানি কম করতে করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আবার রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরছে। তিনি জানান, আগামী মাসে আকুর দায় পরিশোধ করতে হবে। আগে যেখানে প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের মতো পরিশোধ করতে হচ্ছিল, এবার করতে হবে এক বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। ফলে আকুর দায় পরিশোধের পরও রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্রি ৯৬৭ কোটি ডলার :বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিস্থিতি ঠিক রাখতে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সোমবার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে এই অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে ৯৬৭ কোটি ডলার। এর আগে এত কম সময়ে কখনও এত ডলার বিক্রির প্রয়োজন হয়নি। গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে ৭৬২ কোটি ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। অবশ্য আইএমএফের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে হিসাব করলে রিজার্ভ এখন ২৪ বিলিয়নের কিছু বেশি। গত বছরের এ সময়ে রিজার্ভ ছিল ৪৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
খোলাবাজারে দর বাড়ছে ডলারের :খোলাবাজারে নগদ ডলার অনেক দিন ধরে ১১০ টাকার আশপাশে দরে বিক্রি হচ্ছিল। তবে কয়েক দিন ধরে হঠাৎ দর বাড়ছে। গতকাল প্রতি ডলার ১১৩ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আগের দিন সোমবার যা ১১২ টাকা ৫০ পয়সা ছিল।