
তিস্তা প্রকল্পে অংশগ্রহণে প্রস্তুত বেইজিং: ইয়াও ওয়েন
- দেশীয়
- এপ্রিল ২৪, ২০২৫
মার্কিন শুল্কনীতির সমালোচনা করে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত চীন। তিনি জানান, মোংলা বন্দর উন্নয়ন এবং চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ কাজ আরও দ্রুত সম্পন্ন করতে চায় বেইজিং। একইসঙ্গে তিস্তা নদী প্রকল্পে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি।
রাজধানীর চীনা দূতাবাসে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ২০২৫ সালের জন্য চীন সরকারের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া, জেইসি ও এফঅ্যান্ডএফ অনুবিভাগ) মিরানা মাহরুখ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরে আলম।
রাষ্ট্রদূত জানান, চলতি বছরে চীন ২৩টি দ্বিপক্ষীয় এবং ৩০টি বহুপক্ষীয় প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আয়োজন করবে, যেখানে ৫০০-এর বেশি বাংলাদেশি অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। স্মার্ট গভর্ন্যান্স, তথ্যপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আর্থিক খাত, পরিবহন, কৃষি, পর্যটন এবং শিক্ষা—এসব খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। রাষ্ট্রদূতের মতে, এই কর্মসূচি বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এবং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ আমাদের সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে। গত মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫-এ যোগ দিয়েছিলেন। বেইজিং সফর করেছিলেন। সফরে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এটা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়নে নতুন পর্যায়। সেই সঙ্গে আমাদের সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে অভূতপূর্ব উচ্চতায় উন্নীত করে। ড. ইউনূসের সফর দুই দেশের মধ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতায় নতুন গতি সঞ্চার হয়। চীন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে সমাজে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ও বিশ্বের উন্নয়নের জন্য সংস্কার আরও গভীর করবে এবং উচ্চস্তরের সুযোগ সম্প্রসারণ করবে চীন।
ইয়াও ওয়েন বলেন, মোংলা বন্দর প্রকল্প এবং চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ ত্বরান্বিত করবে চীন। সেই সঙ্গে তিস্তা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত। চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ অর্থনীতি, সামুদ্রিক অর্থনীতি, অবকাঠামো এবং পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার সুযোগ খুঁজবে। চীনে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা সহজতর করবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সুযোগ সম্প্রসারণ করবে। পাশাপাশি চীনে ব্যবসা, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের বৃহত্তর সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করবে।
মার্কিন শুল্কারোপকে চীন সরকার তীব্র নিন্দা এবং দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের অভিন্ন উন্নয়ন অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার জন্য একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক পরিবেশ প্রয়োজন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা ও বাণিজ্য ঘাটতির অজুহাতে চীন-বাংলাদেশসহ তার সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে, বাণিজ্য বা শুল্কযুদ্ধে কেউ বিজয়ী হয় না। সুরক্ষাবাদ ব্যবস্থা একটি অচলাবস্থা। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে বৃহত্তর উন্মুক্ততা এবং সুষম সুবিধার সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির দিকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন, যাতে অভিন্ন উন্নয়নের স্বার্থে একটি ন্যায্য বিশ্ব গড়ে তোলা যায় ।