
দেশের বহুল উচ্চারিত শব্দ এখন ‘নিরুপায়’!
- দেশীয়
- জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
এদেশের বাতাসে এখন অক্সিজেনের চেয়ে হাহাকারই বেশি! টংয়ের দোকানে এখন আর রাজনৈতিক আলোচনা হয় না, আলোচনা হয় বাজারের তালিকা থেকে আর কি কি বাদ দেয়া যায়। সব কিছুতেই লাগাম টানার পর জীবনের যে ছবিটা ফুটে ওঠে সেটা মানুষের বলে চিনে নিতে কষ্ট হয়।
মঙ্গলবার নতুন করে আবারও বাড়ানো হয়েছে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম, যেটা কার্যকর হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। নতুন মূল্য অনুযায়ী, গ্রাহক পর্যায়ে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর জন্য আগের চেয়ে ইউনিটপ্রতি ২০ পয়সা মূল্য বেড়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে এ দাম ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা করা হয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ১০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বিইআরসি। এটি ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
সব মিলিয়ে গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছর রেকর্ড হারে বাড়ে জ্বালানি তেলের দাম। গ্যাসের দাম গত জুনে গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। ১৮ জানুয়ারি তা রেকর্ড ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়।
শুধু গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নয়, বেড়েছে সারের দাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ৫১টি সেবার মূল্য, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা পণ্যের দাম, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের দাম। ঢাকা ওয়াসা গত ১৪ বছরে ১৪ বার বাড়িয়েছে পানির দাম।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম এমন সময়ে বাড়ানো হচ্ছে যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ সংকটে রয়েছেন। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে বাড়তি কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে না। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক জরিপভিত্তিক প্রতিবেদনে গত অক্টোবরে জানায়, দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বিদ্যুতের মতো পরিষেবাগুলোর দামবৃদ্ধি যেন গ্রাহকের এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। হতাশা প্রকাশ ও নিজেদের টানাটানি করে চলা ছাড়া তাঁদের কী করার আছে, সেটাই এখন প্রশ্ন। বিদ্যুতের দাম বাড়াতে এখন আর গণশুনানির প্রয়োজন হচ্ছে না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনির হোসেন, বিল্লাল মিয়া, রুহুল আমিনদের সবার কথা প্রায় একই রকম- বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল বাড়লে দোকানের ভাড়া থেকে শুরু করে মালামাল প্রায় সবকিছুর দামই বাড়ে। তখন বাড়তি দাম সমন্বয় করতে ক্রেতার ঘাড়েই চাপে অতিরিক্ত মূল্যের বোঝা। আর এতেকরে ক্রেতারা মনঃক্ষুণ্ন হন। কিন্তু আমাদের কিছুই করার থাকে না। সবাই নিরুপায়।