
নীলফামারীতে ভবন নেই শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
- দেশীয়
- জুন ৬, ২০২৩
নীলফামারীর ছয় উপজেলার ১০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে টিনের ঘর তৈরি করে জোড়াতালি দিয়ে চলছে পাঠদান। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিপাকের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং কর্মকর্তা মো. হাসান তারিক জানান, জেলায় ১০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনোটি পরিত্যক্ত, কালবৈশাখী ঝড়ে আবার কোনোটির টিনের চাল উড়ে গেছে। কোনও রকমে টিনের অস্থায়ী ঘর তৈরি করে পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষকরা আর বাধ্য হয়ে শিশুরাও পড়তে আসে।
বিদ্যালয়গুলোতে ভবন না থাকায় প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে টিনের ঘরে। এ ছাড়া বর্ষার সময় বৃষ্টিতে বইখাতা ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই গরমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
নীলফামারী সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী মেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশঝাড়ের পাশে ছোট টিনের ঘরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। শিক্ষকদের বসার জন্য অফিস ঘর নেই। টিনের ঘরের এক কোণে দাফতরিক কাজ চলছে।
একই অবস্থা জলঢাকা উপজেলার হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম সানি জানায়, ‘কোনও ক্লাসরুম নেই, বসার জায়গা নেই। আমরা অনেক কষ্টে গরমের মধ্যে পড়ালেখা করি। আর বৃষ্টির সময় বইখাতা ভিজে যায়।’
একই এলাকার অভিভাবক আব্দুল কাদের বলেন, ‘বিদ্যালয়ে পরিবেশ না থাকলে শিশুরা কীভাবে পড়াশোনা করবে? ক্লাসরুম না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ কম। এই গরমে টিনের ঘরে তারা ক্লাস করছে। এটা কোনও অভিভাবক মেনে নিতে পারে না।’
হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান অনেক ভালো। তবে অবকাঠামো না থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে আছি। এখানে ছয় জন শিক্ষক রয়েছেন। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয় ২০১৩ সালে। শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১০০ জন। তবে তারা ক্লাস করে টিনের একটি ঘরে।’
ডিমলা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের নাউতারা গ্রামের কৈ-পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও বেহাল দশা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা সুলতানা জানান, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। আর চার শ্রেণিকক্ষের একটি ভবন নির্মিত হয় ১৯৯৩ সালে। সাত মাস আগে উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। বিদ্যালয় ভবনের তিনটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস না হলেও শিক্ষকরা পরিত্যক্ত ভবনের অফিস কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্ত কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে টিনের ঘরে পাঠদান করতে হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ জেলায় এ রকম ১০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বিদ্যালয়গুলোতে জরুরি ভিত্তিতে অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন। আশা করি, চলতি বছরেই বাজেট বরাদ্দ আসবে।’