
প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার নতুন রেলপথের প্রস্তাব
- অর্থনীতি
- সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩
বাংলাদেশ রেলওয়েতে বর্তমানে দুটি অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পের একটি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। অন্যটি চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ। রেলপথ দুটির কোনোটিই এখনো বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যেতে পারেনি। তাছাড়া প্রকল্পগুলো অর্থনৈতিকভাবে কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যেই নতুন করে আরেকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল ও পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪১ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা।
জানা গেছে, মেগা প্রকল্পটির ওপর একটি প্রাক-উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত দীর্ঘ ২১৫ কিলোমিটার নতুন রেলপথসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০২২-২৯ সাল পর্যন্ত। পিডিপিপিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যা ব্যয় হবে তার ৩২ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা নেয়া হবে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে। বাকি ৯ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনে থাকা প্রকল্পটির পিডিপিপি যাচাই-বাছাইরের পর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত ও অবকাঠামো বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘পায়রা বন্দর এখনো পুরোদমে চালু হয়নি। আর ফরিদপুর-বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করার একটি প্রকল্প চলমান। তাই এখনই রেলের এ প্রকল্পের কতটা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি ১৭০ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন পরিচালনা করে সরকারের যে পরিমাণ অর্থ আয় হবে, প্রকল্পটির জন্য গ্রহণ করা ঋণের কিস্তির তুলনায় তা নগণ্য। এর ফলে বাড়বে ঋণ-জিডিপির অনুপাত, যা এক সময় বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তারা বলছেন, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর রেলপথটি ‘আন্ডার ইউটিলাইজড’ থাকার একটা সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ রেলপথটি খুব বেশি ব্যবহৃত হবে না বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৮ হাজার কোটি টাকায় বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথটি আগামী অক্টোবরের শেষের দিকে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে এ রেলপথের অর্থনৈতিক সুফল নিয়েও শঙ্কার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমান দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে মেগা প্রকল্প নেয়া হলে তা জটিল এবং অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অথনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘চলমান প্রকল্পগুলোর ঋণের দায় বাড়ছে, যা জটিল পরিস্থিতি তৈরি করছে। এমতাবস্থায় বড় প্রকল্প গ্রহণ কেবলই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে অর্থনীতি খুব একটা নেই।’
চলমান মেগাপ্রকল্পগুলো দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখতে সক্ষম হবে, তা বাস্তবায়নের পর যথাযথ যাচাই-বাছাই করে নতুন প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন ঘর গোছানোর সময়। রাজস্ব আদায় বাড়লে তখন এমন চিন্তা করা যেতে পারে। এখন মেগা প্রকল্পের ভার নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। বর্তমানে এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে চিন্তা করাটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’