মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৭৪০ টাকা

মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৭৪০ টাকা

মাথাপিছু আয়ের খবর জেনে যারা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে গা এলিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্য মূদ্রার উল্টোপিঠের খবরটা দিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিবেদন। জানা গেছে অর্থনৈতিক চাপের মুখে বেড়েছে আমাদের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ। বিদায়ি অর্থবছর (২০২১-২২) মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩২৪ মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ১০১ টাকা দরে) প্রায় ৩২ হাজার ৭৪০ টাকা।

সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে (২০২০-২০২১) মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯৯ মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে) যা ছিল প্রায় ২৫ হাজার ৪৭০ টাকা। এক অর্থবছরের ব্যবধানে পরিবর্তিত ডলার মূল্যে এই ঋণের পরিমাণ মাথাপিছু বেড়েছে প্রায় সাত হাজার ২৭০ টাকা। অন্যদিকে দিন দিন কমছে সহজ শর্তের বা স্বল্পসুদের ঋণ।

 ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্স ইন টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে (গত জুন পর্যন্ত) বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি রয়েছে পাঁচ হাজার ৫৬০ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার, যা টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ১০১ টাকা দরে) দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৮৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ধরে হিসাব করলে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩২৪ ডলার।

আগের অর্থবছরে (২০২০-২০২১) বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল পাঁচ হাজার ৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে) যা ছিল প্রায় চার লাখ ৩২ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। এই হিসাবে মাথাপিছু ঋণ ছিল ২৫ হাজার ৪৭০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে নাম না প্রকাশ করার শর্তে ইআরডির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ঋণের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং শোধ করার সক্ষমতাও রয়েছে। আরো বেশি ঋণ নেওয়া যেতে পারে; কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোসহ যেসব খাতে ঋণের টাকা খরচ করলে বেশি রিটার্ন আসবে, সেসব খাতেই ঋণ নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধসহ যথাসময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করার দিকে জোর দেওয়া উচিত।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রতিনিয়ত চড়া সুদের বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে থাকছে অধিক শর্তও। আগে যেসব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে সুদবিহীন কিংবা নামমাত্র সুদে ঋণ পাওয়া যেত, এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি বিবেচনায় সস্তা ঋণ পাওয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আগের চেয়ে কমে গেছে অনুদান।

ইআরডি সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ঋণের কঠিন শর্ত ও উচ্চ সুদ কার্যকর করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি সুদের হার শূন্য থেকে বাড়িয়ে ১.২৫ শতাংশ কার্যকর করেছে। এর সঙ্গে আগে থেকে অব্যাহত থাকা সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ বলবত্ রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে এখন সুদের হার দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশ। এ ছাড়া ঋণ পরিশোধের সময়ও কমিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।

এ ছাড়া জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছ থেকে বার্ষিক শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ সুদহারে ঋণ পেত বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি সময়ে এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ ছিল। এখন সুদহার বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ করেছে জাইকা। তাছাড়া পরিশোধের ক্ষেত্রে রেয়াতকাল ঠিক থাকলেও পরিশোধের সময় ১০ বছর কমিয়ে করা হয়েছে ৩০ বছর।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মাথাপিছু ঋণ মূলত দেখা উচিত মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে। সে হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে আমরা এখনো স্বস্তিজনক অবস্থায় আছি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেও এভাবে দেখা হয়; কিন্তু স্বল্প মেয়াদে আমরা অস্বস্তিতে আছি। কারণ আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে অর্থায়নে ঘাটতি আছে আবার ডলার সংকটও আছে। এসব কারণে স্বল্প মেয়াদের ঋণ পরিশোধ এক ধরনের চাপের মধ্যে আছে। আর এগুলো শুধু সরকারি ঋণ। এর বাইরে বেসরকারি ঋণও আছে। সেসব ঋণেরও একটি চাপ রয়েছে।’

আরও পড়তে পারেন

নতুন আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে

নতুন আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কক্সবাজারে নতুন করে আরও প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা…
জুনের প্রথম দিকেই আসছে নতুন নোট

জুনের প্রথম দিকেই আসছে নতুন নোট

ঈদুল আজহার আগেই বাজারে ছাড়া হচ্ছে নতুন ডিজাইনের টাকার নোট, যা দুই টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা মূল্যমান পর্যন্ত…
পারমিট ছাড়া হজ পালনে কঠোর ব্যবস্থা ঘোষণা সৌদি আরবের

পারমিট ছাড়া হজ পালনে কঠোর ব্যবস্থা ঘোষণা সৌদি আরবের

সৌদি আরব হজ পারমিট সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, যারা বৈধ…