
মানব শরীর ২৫ বছরে হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী!
- স্বাস্থ্য
- জুন ১২, ২০২৩
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের ৫২ শতাংশের শরীরে ‘অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স’ পাওয়া গেছে। এ তথ্য জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করতে না পারলে ২০৫০ সাল নাগাদ অর্থাৎ ২৫ বছরের মধ্যে মানুষের শরীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠবে।
গতকাল রোববার বিএসএমএমইউ’র ‘অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য জানান।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে আইসিইউতে রাখা রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিক যেমন মেরোপেনাম রোগীদের শরীরে কাজ করছে না। এজন্য অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। অপব্যবহার রোধ করতে না পারলে ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের শরীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠবে। ফলে করোনার চেয়ে দ্বিগুণসংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। তাই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ যাতে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
সেমিনারে ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহিদুল ইসলাম উপস্থাপিত ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামস ফর ইনফেকশন কন্ট্রোল ইন অ্যা টারশিয়ারি কেয়ার হসপিটাল’ প্রবন্ধে বলেন, বিএসএমএমইউ’র আইসিইউতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ রোগীর অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স পাওয়া গেছে। হৃদরোগ, কিডনি, শিশু ও নবজাতক বিভাগের রোগীদের মধ্যে এ হার ছিল ২১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বে বছরে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্সে ভোগা রোগীদের মৃত্যুর হার ৭ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এ মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটিতে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স প্রতিরোধ শুধু চিকিৎসকদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ পোলট্রি শিল্পে উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রীতে বিশেষ করে মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত ৫৫ শতাংশ।
জহিদুল ইসলাম বলেন, মৎস্য, পশু ও পোলট্রি শিল্পে ১৯ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষি খাতও এর আশঙ্কার আওতামুক্ত নয়। এসব খাবার খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে।
ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী ডা. মো. নাজমুল হাসান ‘রেশনাল ইউজ অব অ্যান্টিবায়োটিকস : ক্লিনিশিয়ান্স রোল ইন অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে অপ্রয়োজনে আন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি পশুপালন ও কৃষিক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেন।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।