
মুডি’স রেটিংয়ে অবনমন বাংলাদেশের
- অর্থনীতি
- মে ৩১, ২০২৩
আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিস বাংলাদেশ সরকারের লং টার্ম ইস্যুয়ার ও সিনিয়র আনসিকিউরড রেটিং ‘বিএ৩’ থেকে অবনমন করে ‘বি১’ নির্ধারণ করেছে। একই সঙ্গে শর্ট টার্ম ইস্যুয়ার রেটিং (স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাধ্যবাধকতা পূরণের সামর্থ্য) নির্ধারণ করেছে ‘নট প্রাইম’। এর মাধ্যমে গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রেটিং অবনমন পর্যালোচনার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, সেটির পরিসমাপ্তি ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ নিয়ে গতকালই এ রেটিং প্রকাশ করেছে মুডি’স।
মুডিস বলেছে, পরিস্থিতি খানিকটা সহজ হলেও বাংলাদেশে ডলার-সংকট চলমান এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাচ্ছে, যা দেশটির বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতির ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে আমদানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে। যার ফলাফল হিসেবে জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা পুরোপুরি প্রত্যাহার করেনি। একাধিক বিনিময় হার চালু এবং সুদের হার ঠিক করে দেওয়ার মতো অপ্রচলিত যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেও দেশটি ফিরে আসেনি। এসব পদক্ষেপ বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি ঘটাচ্ছে।
এ ছাড়া অর্থনীতির আকারের তুলনায় কম রাজস্ব আদায়ের ফলে সরকারের পছন্দসই নীতি গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে টাকার অবমূল্যায়ন ও স্বল্প সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ফলে সুদ বাবদ সরকারকে আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, যা তার ঋণ গ্রহণের সক্ষমতাকে দুর্বল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মুডিস আশা করছে, বিদেশি অর্থায়ন বৈদেশিক ও রাজস্বসংক্রান্ত চাপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করবে। তবে মহামারির আগের তুলনায় বৈদেশিক পরিস্থিতি দুর্বল থাকবে এবং উঁচু মাত্রার ঋণের কারণে রাজস্ব পরিস্থিতি দুর্বল হবে। বিশেষ করে মুডিস মনে করছে, যেসব রাজস্ব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হতে অনেক বছর লেগে যাবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির পূর্বাভাস স্থিতিশীল রাখার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুডিস বলেছে, দেশটি কম সুদে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থায়ন ও সহায়তা পেয়ে যাচ্ছে। ফলে বৈদেশিক ও রাজস্ব খাতে চাপ হালকা হবে বলে তারা মনে করছে।
বাংলাদেশের সামাজিক ঝুঁকির অবস্থানও বেশ নেতিবাচক পর্যায়ে। উচ্চ ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্যের হার কমেছে। এতে মৌলিক সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শিক্ষার সুযোগ ও ফলাফল, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং জনশক্তিকে অন্তর্ভুক্তিকরণের মতো বিষয়গুলো সামাজিক ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে।
বাংলাদেশের দুর্বল প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন পরিস্থিতি এর রেটিংকে সীমাবদ্ধ করেছে এবং এতে গর্ভন্যান্স ইস্যুয়ার প্রোফাইল স্কোর ‘জি৪’ দাঁড়িয়েছে, যা উচ্চমাত্রায় নেতিবাচক। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করছে, যেখানে আইনি কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতাও সীমিত। এসব সুশাসন চ্যালেঞ্জের বিষয়টি ব্যাংক খাতের সম্পদের মানের ক্ষেত্রেও আংশিক অবদান রেখেছে। পাশাপাশি একটি অবনতিশীল মুদ্রানীতি কাঠামো সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে অবমূল্যায়িত করেছে এবং আর্থিক বিচক্ষণতাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে বলে মনে করছে মুডি’স।