
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাব দিতে চীনের পদক্ষেপ
- শিল্প বানিজ্য
- ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন। এর জবাবে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়, যা বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান শক্তির মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
প্রত্যুত্তর হিসেবে, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা বেশ কিছু পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা ইতোমধ্যেই কার্যকর হয়েছে।
এই পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্য বিরোধের কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তবে চীন যদি ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে নিজেদের ঘোষিত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুরু করে, তাহলে তার অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বেইজিংয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর ১০ শতাংশ এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারকদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি হবে।
জ্বালানি তেলের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কৃষি যন্ত্রপাতি, পিকআপ ট্রাক ও বড় কিছু গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেমন একটা পিকআপ ট্রাক আমদানি করে না বেইজিং। তাদের বেশির ভাগ গাড়িই আসে ইউরোপ ও জাপান থেকে।
পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনা অর্থনীতি বিভাগের প্রধান জুলিয়ান ইভানস–পিচার্ড বলেন, চীনা শুল্কের মুখে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যা দেশটি থেকে চীনের আমদানি করা পণ্যের প্রায় ১২ শতাংশ। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে চীন থেকে আমদানি করা সাড়ে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য।
শুল্কের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে চীন। এর একটি হলো মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান গুগলের বিরুদ্ধে তদন্ত। তবে কী ধরনের তদন্ত হবে, তা স্পষ্ট নয়। ২০১৮ সাল থেকেই চীনে গুগলের সেবা বন্ধ রয়েছে।
তবে চীনে এখনো গুগলের কিছু ব্যবসা চালু রয়েছে। স্থানীয় ডেভেলপারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চীনের বাজারে গেমস ও অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। গুগল নিজেদের মাত্র ১ শতাংশের মতো সেবা বিক্রি করে চীনে। তাই চীনে যদি গুগলের সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার প্রভাব প্রতিষ্ঠানটির ওপর খুব একটা পড়বে না।
যুক্তরাষ্ট্রে ২৫টি বিরল ধাতুর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে চীন। এর মধ্যে কয়েকটি ধাতু ইলেকট্রনিক পণ্য ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের মূল উপাদান। এই ধাতুগুলোর মধ্যে রয়েছে টাংস্টেন। ধাতুটি মহাকাশবিষয়ক শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধাতুটি পাওয়াও কঠিন।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনা অর্থনীতি বিভাগের প্রধান জুলিয়ান ইভানস-পিচার্ড বলেন, রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিপ, সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রপাতি, ওষুধশিল্প এবং মহাকাশ–সংক্রান্ত শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেসব ধাতু যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন আমদানি করে সেগুলো কোনো পদক্ষেপের লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
তবে প্রশ্ন রয়েছে, বিরল ধাতু রপ্তানির ওপর চীনের এই বিধিনিষেধ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে? আপাতত মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। সোমবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বিরল ধাতু সরবরাহের নিশ্চয়তা দিক ইউক্রেন। এর বিনিময়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে দেশটিকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেবে ওয়াশিংটন।