রপ্তানির ৩০০ কোটি ডলার কেন আসছে না: আইএমএফ

রপ্তানির ৩০০ কোটি ডলার কেন আসছে না: আইএমএফ

আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার বাংলাদেশের বৈদেশিক মূ্দ্রা সংকটের একটি প্রধাণ কারন। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে ৩০০ কোটি ডলার কেন দেশে আসছে না, তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদল গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি উত্থাপন করে।

দলটি এমন এক সময়ে রপ্তানি আয়ের একটি অংশ দেশে না আসার বিষয়ে জানতে চাইল, যখন বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার–সংকট চলছে। সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে ব্যাংক অনেক সময় তাঁদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।

আইএমএফের প্রতিনিধিদলের (স্টাফ কনসাল্টেশন মিশন) সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ দলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। আর আইএমএফের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন প্রতিনিধিদলের (মিশন চিফ) প্রধান রাহুল আনন্দ।

বৈঠকটি আয়োজনের বিষয়ে আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে বাণিজ্যসচিবকে যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, সে অনুযায়ী বৈঠকের আলোচ্যসূচি ছিল শুল্কনীতি প্রণয়নের হালনাগাদ অবস্থা, বাণিজ্য চুক্তি ও শুল্কহারের ওপর চুক্তির প্রভাব, শুল্ক প্রশাসনের ডিজিটালাইজেশন এবং এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা ইত্যাদি।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়নি। পুরো আলোচনাই হয়েছে রপ্তানির সঙ্গে সম্পর্কিত সব বিষয় নিয়ে। যেমন রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সমস্যা এবং রপ্তানির ৩০০ কোটি ডলার দেশে না আসা, আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর থাকা এবং রপ্তানি বৃদ্ধির উপায়।

৩০০ কোটি ডলার না আসা নিয়ে আইএমএফের প্রশ্নের জবাবে কী বলা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘বলেছি যে এটা তো অনেক বছরের ব্যাপার। এ সময়েই যে ডলারটা আসেনি, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। দেখতে হবে কত লম্বা সময়ের অঙ্ক এটা।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ মূলত রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার নিয়ে কথা বলেছে। অর্থ পাচার বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস গত নভেম্বরে বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১-২২ প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘পাচার করা অর্থ ফেরত আনা দুরূহ কাজ। ডলার একবার চলে গেলে সহজে ফেরত আনা যায় না।’

ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা। যদিও জিএফআইয়ের এ তথ্য পুরোটা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করে বিএফআইইউ। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সম্মেলন বলেছিলেন, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অর্থ পাচার হচ্ছে।

আইএমএফের পক্ষ থেকে আরও জানতে চাওয়া হয়, আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ের ডলারের একই দর থাকা বাঞ্ছনীয় কি না। বাণিজ্যসচিব সাংবাদিকদের বলেন, আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে ডলারের দরের পার্থক্য কমে এসেছে। আইএমএফকে বলা হয়েছে, অভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রার হারের বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। আগামী জুলাইয়ে নতুন কিছু দেখা যেতে পারে।

বাণিজ্যসচিব বলেন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার প্রস্তুতি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ নতুন নতুন বাজারে যাওয়ার বিষয়টি আইএমএফকে জানানো হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোতে এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এ কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি একটু শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়তে পারেন

নতুন আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে

নতুন আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কক্সবাজারে নতুন করে আরও প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা…
জুনের প্রথম দিকেই আসছে নতুন নোট

জুনের প্রথম দিকেই আসছে নতুন নোট

ঈদুল আজহার আগেই বাজারে ছাড়া হচ্ছে নতুন ডিজাইনের টাকার নোট, যা দুই টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা মূল্যমান পর্যন্ত…
পারমিট ছাড়া হজ পালনে কঠোর ব্যবস্থা ঘোষণা সৌদি আরবের

পারমিট ছাড়া হজ পালনে কঠোর ব্যবস্থা ঘোষণা সৌদি আরবের

সৌদি আরব হজ পারমিট সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, যারা বৈধ…