রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়ানোর টার্গেট জঙ্গিদের

রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়ানোর টার্গেট জঙ্গিদের

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশ এখন তাদের হাত থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছে। কারন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো এখন হয়ে উঠেছে অপরাধের প্রধান জায়গা। মূলত তাদের কর্মহীনতা আর দারিদ্রতার কারনে দেশের অনেক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনেরই টার্গেট এখন রোহিঙ্গারা। তাদের জঙ্গিসংগঠনগুলোকে দলে ভেড়াতে দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের প্রলোভন। রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েই কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকায় আস্তানা গাড়ে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র সদস্যরা। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত করতে সক্রিয় রয়েছে আরও কয়েকটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। তবে এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রলোভনে ফেলে জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে এখনও অস্পষ্ট ধারণার মধ্যেই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা বলছেন, জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া হোক বা অন্য কোনও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন—তাদের সদস্যরা পাহাড় বা অন্য এলাকায় অবস্থান করলেও তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

সম্প্রতি র‍্যাবের অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ এবং সংগঠনটির বোমা তৈরির প্রশিক্ষক আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলমকে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশ থেকে গ্রেফতার করা হয়। আত্মগোপনের উদ্দেশ্যেই তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে অবস্থান করছিল। আত্মগোপনে থেকে রোহিঙ্গাদের রিক্রুট করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গি সংগঠনের এই সদস্যদের।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া শুধু নয়, রোহিঙ্গাদের নিজেদের দলে টানতে সক্রিয় রয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি)। রোহিঙ্গাদের রিক্রুটের জন্য কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য মোটা অংকের টাকাও অনুদান দেওয়া হতো সংগঠন থেকে।

র‍্যাব বলছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল ইসলাম, জামায়াত মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি, হরকতুল জিহাদসহ বেশ কয়েকটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় এই নতুন জঙ্গি সংগঠন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য কী—সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট জানা যায়নি। জঙ্গি সংগঠনটি তাদের সক্ষমতা কিংবা পরিচয় প্রকাশের আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পাকড়াও হয়েছে। দলছুট হয়ে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। কোথাও নাশকতা কিংবা নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন একই জায়গায় অবস্থান করার কারণে বর্তমানে একাধিক গ্রুপে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার থেকে আসা মাদক ইয়াবা, আইসসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এছাড়া নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। সেইসাথে বাড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। একাধিক গ্রুপ হওয়ার কারণে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা নানাভাবে তাদের দলে ভেড়াতে রোহিঙ্গাদের আকৃষ্ট করছে। রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়াতে পারলে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো যে কোনও সময় যে কোনও জায়গায় বড় ধরনের নাশকতা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে সব মহলকে বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ভবিষ্যতে আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা সবকিছু সেইদেশে ফেলে এসেছে। কাজেই যে কোনও টেররিস্ট তাদেরকে প্রলুব্ধ করতে পারে—এই শঙ্কার কথা আমি সবসময় বলে আসছি।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রোহিঙ্গাদের রিক্রুট করা হচ্ছে—এ বিষয়ে এখনও সেরকম কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়তে পারেন

নতুন আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে

নতুন আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কক্সবাজারে নতুন করে আরও প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা…
জুনের প্রথম দিকেই আসছে নতুন নোট

জুনের প্রথম দিকেই আসছে নতুন নোট

ঈদুল আজহার আগেই বাজারে ছাড়া হচ্ছে নতুন ডিজাইনের টাকার নোট, যা দুই টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা মূল্যমান পর্যন্ত…
পারমিট ছাড়া হজ পালনে কঠোর ব্যবস্থা ঘোষণা সৌদি আরবের

পারমিট ছাড়া হজ পালনে কঠোর ব্যবস্থা ঘোষণা সৌদি আরবের

সৌদি আরব হজ পারমিট সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, যারা বৈধ…