রোহিঙ্গারা ‘নতুন ফিলিস্তিনিতে’ পরিণত হতে পারে: জাতিসংঘ

রোহিঙ্গারা ‘নতুন ফিলিস্তিনিতে’ পরিণত হতে পারে: জাতিসংঘ

কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত, রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী খুব শিগগিরই ‘নতুন ফিলিস্তিনিতে’ পরিণত হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত অলিভিয়ার ডি শাটার।

সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে গার্ডিয়ানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ‘একেবারে ভয়াবহ’ পরিস্থিতি হিসাবে উল্লেখ করে, তিনি অবহেলিত এ সংকটের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ‘নতুন ফিলিস্তিনি’ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি বলছেন, তারা বেশ দীর্ঘ এবং ক্রমবর্ধমান অবহেলিত সংকটের মধ্যে আটকা পড়ে গেছেন। শুটার বলেন, কক্সবাজারের জনাকীর্ণ শিবিরে বসবাসকারী প্রায় ১০ লাখ মানুষকে তাদের আশ্রয়দানকারী দেশ বাংলাদেশে কাজ করার অধিকার দেওয়া উচিত। ক্রমহ্রাসমান আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর তাদের নির্ভরশীল হতে বাধ্য করাটা মোটেও স্থিতিশীল নয়।

এদিকে আন্তর্জাতিক দাতারা এখন অন্য নানা সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে, তহবিল সংকটের কারণে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য বাবদ বরাদ্দ প্রতি মাসে মাত্র ৮ মার্কিন ডলারে (৬ দশমিক ৫০ পাউন্ড) কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন।

শুটার বলেন, আপনি যদি সাম্প্রতিক সময়ের উচ্চ খাদ্যমূল্যের মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে একে যুক্ত করেন, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় বছরের শুরুর তুলনায়, শরণার্থীদের ক্যালোরি গ্রহণ এবং পুষ্টির মান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। শিশুদের জন্য অপুষ্টি এবং অপুষ্টির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে।

তবে সব থেকে ভয়াবহ দিক হচ্ছে, এই মানুষগুলো বাঁচার জন্য পুরোপুরি মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তাদের কাজ করা নিষিদ্ধ। তারা একেবারে একটা জায়গায় আটকে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শুটার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লোকজন একেবারে শুয়ে বসে অলসতায় দিন কাটায়।

ফলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বাড়ছে। ক্যাম্পের নিরাপত্তার সমস্যা রয়েছে। সশস্ত্র গ্যাং মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে সন্ধ্যায় তাদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আর এসব পরিবারের হতাশার অবস্থাকে উপেক্ষা করা উচিত হবে না।

শুটার বলেন, বাংলাদেশ সরকারের আশঙ্কা, রোহিঙ্গাদের কাজ করার অনুমতি দিলে তারা এখানে আরও বেশি সময় থাকতে উৎসাহিত হবে। এতে জনসেবার ওপর চাপ বাড়বে এবং অন্যদের চাকরির সুযোগ হ্রাস পাবে। এ ধারণাকে ভুল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি তারা কাজ করতে পারে, তাহলে তারা কর দেবে, তারা ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারবে যা অন্যদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। তিনি বলেন, সব মানুষেরই জীবিকা অর্জনের অধিকার রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে মিয়ানমারের জান্তাকে চাপ দিতে ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা করেছে এবং শরণার্থীদের সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক অর্থায়নের সংকটেরও ইঙ্গিত করেছে।

বিশেষ দূত বলেন, রোহিঙ্গা সংকট রাডারের অনেক নিচে নেমে গেছে। এক্ষেত্রে আরও বেশি আন্তর্জাতিক মনোযোগ একান্তভাবে প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যথায় এই লোকজন ১০ বছরের মধ্যে নতুন ফিলিস্তিনিতে পরিণত হবে।’

আরও পড়তে পারেন

নতুন আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে

নতুন আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কক্সবাজারে নতুন করে আরও প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা…
জুনের প্রথম দিকেই আসছে নতুন নোট

জুনের প্রথম দিকেই আসছে নতুন নোট

ঈদুল আজহার আগেই বাজারে ছাড়া হচ্ছে নতুন ডিজাইনের টাকার নোট, যা দুই টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা মূল্যমান পর্যন্ত…
পারমিট ছাড়া হজ পালনে কঠোর ব্যবস্থা ঘোষণা সৌদি আরবের

পারমিট ছাড়া হজ পালনে কঠোর ব্যবস্থা ঘোষণা সৌদি আরবের

সৌদি আরব হজ পারমিট সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, যারা বৈধ…