
সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও দিল্লির মসনদে যাচ্ছেন মোদি
- আন্তর্জাতিক
- জুন ৫, ২০২৪
সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও আবার দিল্লির মসনদে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। এই নিয়ে টানা তৃতীয়বার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পাশে নিজের নামটিও তিনি খোদাই করতে চলেছেন। যদিও নেহরুর মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে তিনি ব্যর্থ হলেন। পারলেন না ‘চার শ পার’ স্লোগান সার্থক করে রাজীব গান্ধীর রেকর্ড টপকে যেতে।
গতকাল মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের ফল মোদির দল বিজেপি এককভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেলেও তাদের এনডিএ তিন শ আসনও ছুঁতে পারল না। প্রবলভাবে উঠে এল কংগ্রেসের উদ্যোগে গড়া ‘ইন্ডিয়া’ জোট। টানা এক দশক পর তারা মোদির বিজেপির একদলীয় শাসনের অবসান ঘটাল। সরকার গড়লেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদিকে এখন থেকে হতে হবে পরমুখাপেক্ষী। তাঁর ঘাড়ে প্রতিনিয়ত শ্বাস ফেলবে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া।
ভারতের নির্বাচন কমিশন ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৮৬ আসন পেয়েছে। ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২০২টি আসন। বিজেপি একা সরকার গঠনের জন্য ২৭২ ম্যাজিক ফিগারের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ। দলটি পেয়েছে ২৪০ আসন। কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি। এর অর্থ, বিজেপিকে সরকার গড়তে হলে নির্ভর করতে হবে প্রধানত দুই শরিক নীতীশ কুমারের জেডি–ইউ ও অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) ওপর। এই দুই দলের সম্মিলিত আসন ২৮টি।
কংগ্রেস স্বভাবতই এই ফলে উৎফুল্ল। গতকাল বিকেলে দলীয় দপ্তরে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে পাশে নিয়ে সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ফল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ও নৈতিক পরাজয়। গোটা নির্বাচনটাই বিজেপি লড়েছিল মোদির নামে। যাবতীয় গ্যারান্টিও দিয়েছিলেন মোদি। এটা ছিল তাঁর পক্ষে অথবা বিপক্ষের গণভোট। জনতা তাঁর বিরুদ্ধেই মত দিয়েছে। খাড়গে ও রাহুল দুজনেই জানিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে বুধবার (আজ)। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, আগামী দিনগুলোয় প্রশাসক নরেন্দ্র মোদিকে নতুনভাবে আবির্ভূত হতে হবে। সেই ভূমিকা কোনো দিন তিনি পালন করেননি। জোট সরকার চালানোর কোনো অভিজ্ঞতাই মোদির নেই। জোটের ধর্ম কেমন, তা–ও তাঁর অজানা। টানা ১০ বছর দাপিয়ে তিনি শাসন করেছেন। কারও তোয়াক্কা না করে সরকার চালিয়েছেন। পুরোপুরি নিজের ইচ্ছেমতো। সেই উঁচু মাথা হেঁট করে অনমনীয় চরিত্র নমনীয় করে শরিকদের যাবতীয় আবদার মেনে শাসন করার কায়দা তাঁকে শিখতে হবে। আত্মমগ্ন ও কর্তৃত্ববাদী কোনো শাসকের পক্ষে রাতারাতি এই রূপান্তর কঠিন। সেই কঠিন কাজই মোদিকে রপ্ত করতে হবে। এমন মোদিকে কেউ কখনো দেখেনি। সে দিক দিয়ে তিনি নিজেই চমকপ্রদ দ্রষ্টব্য হয়ে উঠবেন।
দেখার বিষয় আরও আছে। পাঁচ বছর ধরে মোদি সরকার ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগ, এনআইএর যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। তাদের দল ভাঙানো ও দল গঠনের মতো কাজে লাগিয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। রাহুল নিজেই গতকাল বলেছেন, কংগ্রেসকে বিপদে ফেলতে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছিল। তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর শক্তিশালী বিরোধীদের চাপে এই প্রবণতা কতটা বজায় থাকে, সেটাও দেখার। স্পষ্টতই এত দিন মোদির সরকার এদের যেভাবে ব্যবহার করে এসেছে, তাতে তাদের রাশ টানতেই হবে। এত দিন ধরে যে বিশেষণে মোদি ভূষিত হয়েছেন, সেই ‘স্বৈরতন্ত্রী’ তকমা বজায় রাখতে তিনি পারবেন কি?
এই ফল জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা নতুন করে ফিরিয়ে আনল। হিন্দি বলয়ে যে দল প্রায় মুছে গিয়েছিল, কিছুটা হারানো জায়গা তারা ফিরিয়ে আনল। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান ও বিহারে। পাঞ্জাবের প্রতিষ্ঠিত সব কংগ্রেস নেতা বিজেপিতে চলে গেলেও একার ক্ষমতায় তারা অধিকাংশ আসন জিতেছে। মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটকে জমি খুঁজে নিয়েছে। ব্যর্থতা তাদের অবশ্যই আছে। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওডিশা, অন্ধ্র প্রদেশে কিছুই প্রায় করতে পারেনি। কিন্তু আসনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করে ১০০ ছুঁই ছুঁই অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া দলটাকে চনমনে করে তুলবে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে পায়ের তলার জমি আরও শক্ত করতে প্রিয়াঙ্কাকে রায়বেরিলি থেকে জিতিয়ে আনার পরিকল্পনা যখন রয়েছে।