
৬৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নবায়ন
- অর্থনীতি
- আগস্ট ১৪, ২০২৩
নিয়মের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে গত বছর ব্যাংকিং খাতে রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমেছে। গত এক বছর ব্যাংকিং খাতে ৬৩ হাজার ৭২০ (প্রায় ৬৪ হাজার) কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এত বিপুল অঙ্কের ঋণ নবায়নের পরও খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মার্চ পর্যন্ত তা আরও বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে বিশেষ ছাড়ের আওতায় ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে আড়াই গুণের বেশি খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। বিশেষ ছাড়ের আওতায় নবায়ন করা ঋণের একটি অংশ পুনরায় খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। গত বছর নবায়ন করা পুনরায় খেলাপি হওয়ার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। আইএমএফ-এর শর্ত ছিল-বছরে কী পরিমাণ খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়, এর তথ্য প্রকাশ করা। ওই শর্তের আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রথমবারের মতো এসব তথ্য প্রকাশ করল। একই সঙ্গে আইএমএফ-এর শর্ত ছিল খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রধান ড. মইনুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ নবায়নের প্রক্রিয়ার ব্যাপকভাবে অপব্যবহার হচ্ছে। প্রণোদনা বা বিশেষ ছাড়ের আওতায় খেলাপি ঋণ একবার নবায়ন করা হচ্ছে, শর্ত অনুয়ায়ী কিস্তি দিচ্ছে না। ফলে আবার সেগুলো খেলাপি হচ্ছে। আরও ছাড় দিয়ে পুনরায় নবায়ন করা হচ্ছে। এভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ নবায়নের খেলা চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিচ্ছে, তা সঠিক নয়। প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মোট ঋণের কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এখন খেলাপি হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখাচ্ছে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশ।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে বিশেষ ছাড়ের আওতায় ব্যাংকগুলোর ঋণখেলাপি গ্রাহকরা ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন। ২০২১ সালে বিশেষ ছাড়ের আওতায় নবায়ন করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ নবায়নের প্রবণতা বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানো হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। গত চার বছরের মধ্যে ২০২০ সালে সবচেয়ে কম ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। কারণ ওই বছরে করোনার কারণে বিশেষ ছাড়ের আওতায় ঋণ পরিশোধ না করলেও তা খেলাপি করা হয়নি। ওই বছর ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালে মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল খেলাপি। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণই ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০২১ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ নবায়নের মধ্যেও আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা।