
প্রান্তিক উদ্যোগকে সহযোগিতা করা উচিত
- অর্থনীতি
- নভেম্বর ১৭, ২০২২
বাজেট, মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি-রফতানি, জনশক্তি রফতানি, ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা, রাজস্ব আয়, সঞ্চয়পত্র, মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ, ব্যাংকের সুদের হার, ঋণ, ঝুঁকি, অভাবসহ অর্থনীতির আরো সব অনুষঙ্গ নিয়েই তার কাজ। বলছি ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কথা। তিনি ছিলেন ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’-এর নবম গভর্নর। ড. ফখরুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব ত্যাগের পর তিনি ২০০৫ সালের ১ মে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। সম্প্রতি অর্থনীতি বিষয়ক পত্রিকা পূর্বার সঙ্গে কথা হয় এই গুণী ব্যক্তির। সেই আলোচনার অংশবিশেষ উল্লেখ করা হলো।
অর্থনীতিতে ‘অভাব’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অভাব দেখা দিলে নাকি ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়! এমন একটি প্রবাদ চালু আছে সমাজে। আপনার মতামত কী?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : সুকান্তের সেই কবিতার লাইন মনে আছে? ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়/পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’ এটাও সেই একই কথা। আসল কথা হচ্ছে পেটে ভাত না থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। ভালো থাকে না। তবে সুখে থাকার জন্য খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। আমাদের সমস্যা হচ্ছে একটা অভাব পূরণের সঙ্গে সঙ্গে আরো নতুন চাহিদা তৈরি হয়ে যায়। ভোগের চাহিদা কমাতে হবে জীবনে।
বাংলাদেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থাকে কীভাবে দেখছেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : করোনা অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বকে দুর্বল করে দিয়েছে। বিশেষ করে দারিদ্র্যের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঘটেছে। বিশাল জনগোষ্ঠী কর্মহীন। তবে কোনো দেশই একেবারে মরে যায়নি। মহামারি বিভিন্নভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। বাংলাদেশেও করোনার কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দেওয়া কঠিন। এক্ষেত্রে বৈষম্য আরো বাড়বে। তবে সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
দারিদ্র্যের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঘটেছে। বিশাল জনগোষ্ঠী কর্মহীন
বর্তমান আর্থিক খাতের বিশেষ দুর্বলতা ও চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : ব্যাংকিং খাতের কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন। খেলাপি ঋণ, বিদেশে টাকা পাচার এবং স্বজনপ্রীতিমূলক ব্যাংকিং বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে গোষ্ঠীভিত্তিক ব্যাংক না দিয়ে বরং দুর্বল ব্যাংককে সবল করতে হবে। চ্যালেঞ্জের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত অন্যতম। এ খাতে শুধু অর্থ বরাদ্দ দিলেই চলবে না। সুষ্ঠ বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। কেনাকাটায় অন্যায়-দুর্নীতি যাতে না হয় সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া উচিত। এছাড়া অর্থনীতির চালিকাশক্তি কৃষি খাতকে আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে এসএমই, সিএমএসএমই, পোল্ট্রি খামারসহ বিভিন্ন প্রান্তিক উদ্যোগকে আরো সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত। একই সঙ্গে প্রবাসীদের দিকেও নজর দেওয়া দরকার। এ সময় আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সামাজিক নিরাপত্তা। যেসব নিম্ন আয়ের বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার রয়েছে, তাদের কাজের ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু কাগজে না রেখে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ব্যবস্থা না নিলে প্রকৃতপক্ষে কেউ-ই উপকৃত হতে পারবে না। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বা এডিপির ছোটখাটো ও অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বরাদ্দ বাদ দিতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণকে সংযুক্ত করা উচিত। গুটিকয়েক দলীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তন আনা যাবে না। স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা কাজ করছেন তাদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। এবারের বাজেটে সরকারের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাজস্ব আহরণ। কারণ, করোনার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। ইতোমধ্যে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান লোকসান গুনছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। দিনমজুরদের আয় একেবারে কমে গেছে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য অনেক বরাদ্দ দিতে হবে।
রিজার্ভ যখন ৪০ মিলিয়ন ডলার পার হয়েছিল তখন আমরা গর্ব করেছিলাম, এখন যে নেমে যাচ্ছে, এটা কি আর নামবে বা এই পরিস্থিতির কী হতে পারে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : এখন ইমপোর্টের গ্রোথটা কিছুটা কমে আসছে। তবে আমাদের ইমপোর্ট ডিপেন্ডেন্ট কান্ট্রি, মেশিনারি জিনিসপত্র ইমপোর্ট করতে হয়, ইমপোর্ট একেবারে জিরো করা যাবে না, অতএব এই চাপটা থাকবে, যদি আমরা ঠিকভাবে ট্যাকেল না করি, ডিমান্ডটাকে কন্ট্রোল না করতে পারি, সমস্যা হতে পারে। শুধু আরএমজি এক্সপোর্টের ওপর ডিপেন্ড করলে হবে না, অন্যগুলোও লাগবে। আরএমজি আবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে, কারণ ইউরোপের ওদিকে একটু ঝামেলা হচ্ছে। হয়তোবা খুব বেশি ইমপ্যাক্ট নাও পড়তে পারে। আর এদিকে রেমিট্যান্সটা যে খুব বাড়ছে তা না, এবং সেটা একটু বাড়াতে হবে; তাহলে হয়তো ফিউচারে জিনিসটা আমরা রোধ করতে পারব। তবে এটা খুব চিন্তার বিষয়, রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছে। এটা ভালো লক্ষণ না।
ডলারের দামটা যে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটার কি স্পেসিফিক কোনো বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় আছে অথবা কোনো বিষয়ে নজর দেওয়া যেতে পারে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : ডলারের মূল্যমান বেড়ে যাওয়ায় আমাদের আমদানি করা সব দ্রব্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, যেটা দেশে উৎপাদনকারী পণ্য ও আমদানি করা পণ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যহ্রাস টেনে ধরা। এর জন্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে নজরদারি এবং দেশে রেমিট্যান্স ও রফতানির অর্থপ্রবাহ বাড়ানো; প্রয়োজনবোধে এফডি আহরণের মাধ্যমে দেশে ডলার আনার প্রচেষ্টা নেওয়া। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট থেকে ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না সেটা একটু দেখা দরকার। ওভার ইনভয়েসিং আন্ডার ইনভয়েসিং এক্ষেত্রে টাকাও পাচার হয়ে যায়, এটাও আমাদের একটা চিন্তার ব্যাপার। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার ব্যাংকাররা কোনো কিছু ম্যনুপুলেট করছে কি না, তারা অনেক সময় অর্থ থাকলেও এলসি খুলতে দেয় না বেশি দামে মানে ডলারে না কিনলে এলসি খুলতে দেয় না, এগুলো দেখতে হবে। তো আমরা এখন ক্রাইসিসের মধ্যে আছি, বিভিন্ন দেশেও আছে, তবে বাংলাদেশে হঠাৎ করে এই জিনিসটা দেখা দিচ্ছে গত কয়েক মাসে, এখন এদিকে ইমিডিয়েটলি নজর দিতে হবে। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে এটা সম্ভব না, এখানে কাস্টমসসহ আরো যারা আছে তাদের দেখতে হবে যে টাকা পাচার হচ্ছে কীভাবে।
আমদানি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে নজরদারি এবং দেশে রেমিট্যান্স ও রফতানির অর্থপ্রবাহ বাড়ানো; প্রয়োজনবোধে এফডি আহরণের মাধ্যমে দেশে ডলার আনার প্রচেষ্টা নেওয়া।
এখন যে পরিস্থিতি মানে ডলারের দাম বাড়া সবকিছু মিলিয়ে ধারণা করা যাচ্ছে পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে, তো এটা মোকাবেলার প্রস্তুতি কি আমাদের আছে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : এটার আর কী করবেন! পেট্রোলিয়ামের দাম তো বেড়েই যাচ্ছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) বাড়ছে। তারপর গভর্নমেন্ট এখন যেটা চেষ্টা করছে, কিছু রেট বাড়াবে হয়তো। ভর্তুকি যেটা দেয়, সেটা পুরোপুরি প্রত্যাহার করবে না হয়তো পর্সিয়ালভাবে ভর্তুকি হয়তো কিছুটা প্রত্যাহার করতে পারে। আরেকটা আপনি দেখছেন যে সিএনজির যে একটা শর্টেজ সেটা, এখন তো লোডশেডিং করছে, অতএব সেটা একটা দিক আর কি। সে কারণে হয়তো তখন আমাদের যে অর্থ খরচের চাপটা পড়ার কথা, সেটা কিছুটা কমবে। আমরা রেন্টাল পাওয়ারপ্ল্যান্টে যে টাকাটা দিই সেটার ব্যাপারে গভর্নমেন্টকে লক্ষ্য করতে হবে, কারণ আমরা তো ইলেক্ট্রিসিটি ওদের কাছ থেকে কিনছি না, আবার তাদেরকে চার্জ দিতে হচ্ছে- এই ব্যাপারে এখন চিন্তা করার সময় আসছে। ওদেরকে তো টাকা দিয়েই দিতে হচ্ছে কারণ চুক্তি অনুযায়ী। এগুলো যদি করি তাহলে হয়তো সরকারি অর্থ সাশ্রয় হবে আর কি।
বাংলাদেশ ব্যাংকে যে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে গেল, এটা কি স্যার আর পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, এটার ভবিষ্যৎ কী?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : এটা তো অনেক দিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তো চেষ্টা করেছে, এই চেষ্টাটা হঠাৎ হঠাৎ, কিন্তু খুব শক্তভাবে চেষ্টা করলে এটা পেতে পারে, এটার লিগ্যাল অলরেডি কেস একটা হয়েছে, কেসের একটা ইন্টেরিমেন্ট আসছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সেটাকে পারসু করতে হবে। এটা করলে হয়তো আসার সম্ভাবনা আছে। তবে একেবারে আসবে না বলা যাবে না, এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
আর্থিক খাতের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নজরদারি কতটা কার্যকর?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : মোটামুটি তো কার্যকরী আছে, কার্যকর না থাকলে তো ব্যাংকগুলো একেবারে…। তবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সুপারভিশন আরো জোরদার করতে হবে। আর্থিক খাতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাধিক্য এবং ব্যাংকের কিছুটা মন্থর প্রক্রিয়ার জন্য আশানুরূপ হচ্ছে না। নজরদারি আরো গতিশীল করতে হবে। অডিট, পরিদর্শন, ভিজিল্যান্স, অন-সাইট ও অফ-সাইট বিভাগ- সব ক’টি আরো সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য। ব্যাংকে কোনো অনিয়ম ও বিচ্যুতি ঘটলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে খুব ডিফিকাল্ট হবে।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সুপারভিশন আরো জোরদার করতে হবে। আর্থিক খাতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাধিক্য এবং ব্যাংকের কিছুটা মন্থর প্রক্রিয়ার জন্য আশানুরূপ হচ্ছে না
আপনি নিজেও আমলা থেকে গভর্নর হয়েছিলেন, তো আমরা এটাই দেখি প্রায় বাংলাদেশ ব্যাংকে শীর্ষপদে মূলত আমলারাই দায়িত্বপ্রাপ্ত হন কিন্তু ব্যাংকিং প্রফেশনে যারা তাদের মধ্যে থেকে গভর্নর না হওয়াটা কী ঠিক আছে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। সেন্টার ব্যাংকের গভর্নর হতে হলে যে একেবারে ব্যাংকার হতে হবে, তা না। তার অর্থনৈতিক, তারপর উন্নয়ন সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা থাকতে হবে প্লাস আমরা যা দেখলাম, বিশ্বের যে সিনারীয় আছে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার যে প্রেক্ষিত এবং ডেফিনেটলি দেশের প্রশাসন, রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা থাকবে, তবে সে-ই চালাতে পারবে। কিছুটা টেকনিক্যাল, কিছুটা পেশাদারিত্ব নলেজ থাকবে, তবে একেবারে আমলা হয়ে আসবে, আদেশ দেবে নির্দেশ দেবে; সেটা সম্ভব না। আবার একেবারে ইকোনমিস্ট হবে, প্রশাসনের বিষয়গুলো জানবে না বা কন্ট্রোল, রেগুলেশন, কো-অর্ডিনেশন এগুলো জানবে না সেটাও সম্ভব না। এর দুটোরই সংমিশ্রণ লাগবে।
সরকারের সমালোচকরা সতর্ক করছেন যে আমাদের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে যাতে না যায়! বর্তমান পরিস্থিতিটা আসলে কেমন, ওইরকম পরিস্থিতিতে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : এখনো আমি শ্রীলঙ্কার কথা কিছু বলব না, তবে সজাগ থাকতে হবে চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কোভিড-১৯-উত্তর সময়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যে যোগ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বাংলাদেশও এখন বাহ্যিক (বহির্বিশ্ব-সংক্রান্ত) ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে এটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং টেকসই করার বিষয়গুলো আছে। শ্রীলঙ্কার মতো সংকটের অবস্থা হয়নি এখনো। তবে আত্মতুষ্টির মধ্যে না থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো সংকটাপন্ন অবস্থার দিকে যেতে পারে। আমাদের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার থেকে অনেক বড়। অর্থনীতির ক্ষেত্র, অর্থাৎ সেক্টরগুলো ব্যাপক এবং সেগুলোর কার্যক্রম একেবারে থেমে যায়নি, মন্থর হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে।
এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কি যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল বলে মনে করেন?
সালেহউদ্দিন আহমেদ : বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য পণ্য, যেমন সেবা, যাতায়াত- এগুলোর দামও বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি অনেকটা সরবরাহের কারণে। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে দেশেও দাম বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে হারে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ছে, সে হারের চেয়ে দেশীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বেশি। দেশীয় পণ্যের ক্ষেত্রে সরবরাহের প্রক্রিয়ায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মধ্যে কিছুটা যোগসাজশ থাকতে পারে। তা ছাড়া ঘাটে ঘাটে চাঁদা, মধ্যস্বত্বভোগী লোকদের কমিশন আদায়, পরিবহনের ভাড়া ইত্যাদিও কারণ। সরকারের পক্ষ থেকে নজরদারির দুর্বলতা ছিল এবং সময়মতো কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। শুধু পর্যবেক্ষণ করা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনাই যথেষ্ট নয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিদর্শন- এগুলোও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। পণ্যের চাহিদা, সরবরাহ, মজুদ, আমদানি এবং সরকারের ভা-ারে কী পণ্য কতটুকু মজুদ, এগুলোর প্রতি সব সময় নজর রাখতে হবে।